মলয় কর: "আচ্ছা, এটা কৃষ্ণ জীবন পল্লি তো। পলাশ মন্ডলের বাড়িটা বলতে পারবেন?"
- সোজা গিয়ে ডানদিকের দুটো বাড়ি পরেই।
এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকলে প্রায়শই এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে হতে হত আমাদের। দূর দূরান্ত থেকে লোকে আসত চিংড়িকে খেপ খেলার জন্য হায়ার করে নিয়ে যাবে বলে। আর প্রতি শনি, রবিবার তো চিংড়ির বাড়ির সামনে কম করে দুটো করে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকবেই। খেপের মাঠে এতটাই জনপ্রিয় ছিল চিংড়ি। মাঠে খুব ছটফটে ছিল বলে পলাশকে ওই নামে ডাকা হত।
চিংড়িকে যখন খেপ খেলার জন্য হায়ার করে নিয়ে যাওয়া হত, তখন চিংড়ি তাদের বলত, রাত্রি হলে কিন্তু বাড়ি অবধি গাড়ি করে দিয়ে যেতে হবে। তার কারণ চিংড়ির খুব কুকুরের ভয়।
চিংড়িকে একবার হায়ার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দত্তপুকুর। সেখানে সেভেন সাইড খেলা। বিপক্ষে সবাই নাইজেরিয়ান ফুটবলার। চিংড়িরা যখন তাদের বিরুদ্ধে খেলতে নামছে তখন মাঠের বাইরে থেকে চিংড়িদের উদ্দেশে আওয়াজ আসছে, এই বস্তা নিয়ে নাব।
খেলা শুরুর ৫ মিনিটেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায় নাইজেরিয়ার দলটি। সেই সময় শুরু হয় ঝিরঝিরে বৃষ্টি। আর এই বৃষ্টিতে বডির ভারসাম্য রেখে দারুন খেলতে পারে চিংড়ি। সত্যি তাই। পিছিয়ে থাকা ম্যাচটিতে চিংড়ি স্বদেশীদের এগিয়ে দিলেও, শেষ পর্যন্ত নাইজেরিয়ানদের কাছে হেরে যায়। এবং দারুন প্রশংসিত হয় চিংড়িরা। যাদের কাছে খেলতে নামার আগে আওয়াজ খেয়েছিল, তাদের কাছে।
সত্যিই খেপের মাঠে দারুন খেলত চিংড়ি। সোনার আংটি পর্যন্ত পেয়েছে। চিংড়িদের সঙ্গে খেলত শঙ্কর চক্রবর্তীর মামাতো ভাইও।
দুর্দান্ত খেলা সত্ত্বেও খেপের মাঠে আটকে যেতে হয়েছে চিংড়িকে। অভাবের তাড়নায়। চিংড়ি এখন কাজ করে এক মার্বেলের দোকানে।
চিংড়ির একটি ছোট ছেলে আছে। কৌশিক মন্ডল। অনূর্ধ্ব-১৬ বাংলা দলের হয়ে খেলেছে সে। বেলঘড়িয়া অ্যাথলেটিক্সের হয়ে নার্সারি লিগে খেলে। চিংড়ির ইচ্ছা ছেলে বড় ক্লাব খেলুক। তাহলে যদি নিজের স্বপ্ন ছেলের মধ্যে দিয়ে পূরণ হয়।