প্রসেনজিৎ দাস: বাবা ভ্যান চালক। মা পরিচারিকার কাজ করেন। রঞ্জিত দাসের মনে হল তাদের দুই ভাইকে মানুষ করতে দিন-রাত পরিশ্রম করেন তাঁর বাবা-মা।
তাঁর বাবা-মার জন্য তাঁরও কিছু একটা করা উচিত। তখন সে ঠিক করল পড়াশুনার পাশাপাশি ফুটবলও খেলবে। কিন্তু ফুটবল খেলতে যে নূন্যতম সরঞ্জাম লাগে সেটাও কেনার পয়সা নেই তাঁর কাছে। তাহলে কি রঞ্জিত ফুটবল খেলবে না? দারিদ্রতার কাছে হেরে যাবে? না, কখনোই নয়। সে খালি পায়ে, পরনে যা ছিল, সেই পরেই পাড়ার মাঠে নেমে পড়ল।
পাড়ার মাঠে খেলতে খেলতে একদিন জেলাও খেলে ফেলল রঞ্জিত। এবার তাঁর মনে হল গন্ডিটা বাড়াতে হবে। তখন সে খোঁজ পেল বাংলা ও জর্জের কোচ রঞ্জন ভট্টাচার্যের। রঞ্জন তখন অনুশীলন করাচ্ছেন বরানগরে। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করল রঞ্জিত। তিনি রঞ্জিতকে বরানগরে ট্রায়ালে ডাকলেন।
সেই ডাক পেয়ে রঞ্জিত একদিন গ্রাম ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল শহরের উদ্দেশ্যে। ভোর সাড়ে তিনটের ট্রেন ধরে। এবং বরানগরে সময় মতো পৌঁছে ট্রায়ালও দিল। সুযোগও পেয়ে গেল। কিন্তু সেখানে নিয়মিত করতে পারল না। হঠাৎই শরীর খারাপ হয়ে গেল তাঁর।
বেশ কিছু দিন যাওয়ার পর, সুস্থ হয়ে উঠল রঞ্জিত। এবার ঠিক করল সে অন্য জায়গায় ট্রায়ালে যাবে। খবর পেল টালা পার্কে রাসবিহারী ক্লাবের ট্রায়াল হচ্ছে। ট্রায়াল নিচ্ছেন প্রাক্তন ফুটবলার প্রতাপ সেনাপতি। ৫০০ জন ফুটবলার সেখানে ট্রায়াল দিচ্ছে। সেও বাকি ফুটবলার মতো ট্রায়াল দিল, এবং সুযোগও পেল।
সেই মরশুমটা রাসবিহারী ক্লাবের হয়ে দারুন খেলল রঞ্জিত। ডাক পেল মহামেডান এসি থেকে। কিন্তু এই খেলে আর কত টাকা! এই দিয়ে কি আর পরিবারের দারিদ্রতা ঘুচানো যাবে? সেই জন্য সে কলসেন্টারে চাকরি নিল। দিনের বেলায় খেলবে, পড়াশুনা করবে, স্পোকেন ইংলিশ শিখবে আর রাতে ডিউটি করবে। এই ভাবে চলল দিনের পর দিন সংগ্রাম।
কিন্তু একদিন খেপ খেলতে গিয়ে হাঁটুতে চোট পেল রঞ্জিত। পেল বলার থেকে রঞ্জিতের হাঁটুতে ইচ্ছা করে মেরে তাঁকে অকেজো করে দেওয়া হল। যাতে রঞ্জিত আর ফুটবল খেলতে না পারে। ওখানেই শেষ হয়ে গেল রঞ্জিতের স্বপ্ন। ফুটবল তো আর ছেড়ে থাকা যাবে না। তাই রঞ্জিত এখন কোচিং করে। কোচিংয়ের কেউ ভাল খেললে, তাদের কলকাতা ময়দানে পাঠায়। যদি কেউ মসলন্দপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বড় ক্লাবে খেলতে পারে, এই স্বপ্ন নিয়ে।