দিমিত্রি তোমায় খোলা চিঠি.....

অরিত্র বসু: আপনি খুব ভালোভাবে জানেন স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা। আপনার হয়ত এতদিন একটা ব্যক্তিগত ট্রমা ছিল। ঘুমের ঘোরে কেঁপে উঠতেন। একটা অসম্ভব খারাপলাগা নিয়ে ভাবতেন আমি কি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছি?
কেন জানিনা মনে হয় আমাদের সমাজের পরিশ্রমী মধ্যবিত্তদের মুখ আপনি। আপনি সেই ব্যক্তি যিনি বন্ধুবান্ধবের আড্ডায় মুখ ফুটে নিজের ইচ্ছের কথা বলতে পারেন না। অফিসে যার ওপর অতিরিক্ত কাজের দায়িত্ব স্বচ্ছন্দে চাপিয়ে দেওয়া যায়। নিজের মুখে সাফল্যের ভাগ চাইতে পারেন না। বরং মুখচোরা তাঁকে সবকিছু সহ্য করতে হয়। প্রতিপদে কম্প্রোমাইজ করতে হয়। আর অপেক্ষা করে যেতে হয়।
অপেক্ষা শুরুর দিন থেকেই চলছিল যেদিন আপনার উন্মাদনা ঢাকা পড়েছিল জেমি ম্যাকলারেন, জেসন কামিন্সদের গোলের ঝলকে। তারপর কত প্রহর, কত ম্যাচ কেটে গেছে আপনার আকাশে, সূর্য আর ওঠেনি। পরিশ্রমী আপনি, পরিশ্রম করেছেন কিন্তু ভাগ্যের ফেরে নজর চলে গেছে অন্য কোথাও। এদিন আহমেদ জাহুদের কড়া ডিফেন্ডিং এর সময় এসবই হয়ত মাথায় আসছিল।
নিজের প্রতি সৎ থাকলে ভাগ্যও বোধহয় একটা সময় নমস্কার ঠুকে সেই মানুষকে আর ফেরায় না। সারাজীবন নাম্বার টু হতে হতে, হেরে যেতে যেতেও এভাবেই একটা সময়ের পর মানুষ জিতে যায়। একদম শেষ দিন, শেষ ল্যাপের মাহেন্দ্রক্ষনে ভগবান তার জন্যে সাজিয়ে রেখে দেন সব কিছু। জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া নায়কেরা সেদিনই হয়তো জিতে যান। কোন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী মৃত্যুর মুখ থেকেও ফিরে আসতে চায়।
আজকে শেষের সেই দিনটাই ছিল। এই বিজয় হুঙ্কার এই অনাবিল খুশী এই শাপমুক্তির দিন আপনার প্রাপ্য ছিল। ভীষণভাবেই প্রাপ্য ছিল।
সারাজীবন চড়া লাইমলাইট, ফ্রেমের বাইরে থেকে জার্সির ওই লোগোটা চাপড়ে মোহন জনতার উদ্দেশ্যে চিৎকার করা স্রেফ স্রেফ এই দায়িত্ববোধ টুকুই বুকে আঁকড়ে চলা মধ্যবিত্তরাই দিমিত্রি পেত্রাতোস হয়ে থেকে যান। ঈশ্বর তো আসলে রক্ত মাংসের মানুষই হয়।