ধুলোয় মিশে যাচ্ছে মোহনবাগানের আতুঁড়ঘর! চোখের জল ধরে রাখতে পারবেন না। সেন বাড়ি

রৌণক ঘোষঃ কফি হাউসের আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই। মান্না দের সেই বিখ্যাত কফি হাউসের আড্ডা গানের মতোই এই বাংলায় আজ নেই বহু ঐতিহ্যবাহী ঘর-বাড়ি যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির আবেগ, ঐতিহ্য, ভালোবাসা। একটু একটু করে ব্ল্যাক ডিসলভ হয়ে যাচ্ছে আমাদের অতীত।
শ্যামবাজারের শ্যাম পার্কের ঠিক পাশেই সেন বাড়ি। হ্যাঁ এই সেন বাড়ির সঙ্গেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মিত্র পরিবার ও বসু পরিবার তৈরি করেছিল মোহনবাগান ক্লাব।
বসু বাড়িতে জন্ম হলেও এটাই মোহনবাগানের আতুঁড়ঘর। এখানেই শৈশব কৈশোর কেটেছে মোহনবাগানের। মোহনবাগানের শুরুর দিকের বহুদিন কেটেছে এখানে, বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই বাড়ি। পরিব্রাজক আলবেরুনি ভারতে যখন এসেছিলেন, বলেছিলেন আমরা ইতিহাস সংরক্ষণ করতে পারিনা৷ আমরা সত্যি আজও ইতিহাস সংরক্ষণ করতে পারিনা। অতীত যা আমাদের শিক্ষা দেয় সেটা আমরা চিরস্থায়ী করতে পারিনা। ইউরোপের এগিয়ে থাকা কোনো দেশ হলে এই বাড়িটাই হয়তো হত একটা জীবন্ত ইতিহাস, মহাফেজ খানা। আজকের এই দিনে খুদিত পাশানের মতো অতীতের ধুলোবালি মেখে তাকিয়ে আছে এই সেন বাড়ি।
আমরা ধরে রাখতে পারছিনা এই বাড়িটা। আধুনিকতার নামে আমাদের ইতিহাস কুরে কুরে খাচ্ছে গ্রগতি। এতো বড় বাড়ি, যার দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন বিখ্যাত সেন বাড়ির মানুষ। কিন্তু আর কতদিন তা সম্ভব ছিল? বিশাল বড় পরিবারের অনেকই এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। খসে যাওয়া পালেস্তারা বলছিল বহু ভুলে যাওয়া সম্পর্কের কথা। এখন এখানে ফ্ল্যাট হবে। ঐতিহ্যের সেন বাড়ি ভাঙ্গা হচ্ছে। ধুলোয় মিশে যাচ্ছে উমাপতি কুমারের পায়ের ধুলো।
বৃহস্পতিবার মোহনবাগানের প্রাক্তন সচিব সৃঞ্জয় বোস এসেছিলেন এই সেন বাড়িতে, তাঁর একটি আবেগঘন পোস্ট মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। আমরাও আজ সেই বাড়ির করি ডোর বারান্দা, দরদালান, চৌকাঠ, করি বড়গা গুলিকে ধরে রাখছিলাম। ধরে রাখছিলাম বাকি অবশেষ।সেই বিখ্যাত বৈঠক খানা, আড্ডার স্থল।
নতুনত্বের ছোঁয়া আসবে৷ ফ্ল্যাট তৈরি হবে এখানে। কিন্তু সেখানে কি খুঁজে পাওয়া যাবে মোহনবাগানের এক টুকরো ইতিহাস? হয়তো থাকবেনা এই মাটি এই আকাশ.. কিন্তু থেকে যাবে এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের সবুজ-মেরুন ইতিহাস।
যে বাড়িতেই একসময় মোহনবাগানের অফিস ঘর ছিল, যে বাড়িতে একসময় আড্ডা দিতেন উমাপতি কুমার, মান্না-চুনিরা। সত্যিই কি মুছে যাবে সেই সব ইতিহাস? ভেঙে পড়া জানালা আর ইটের ধ্বংসস্তুপের মাঝে এই দৃশ্য দেখলে বুক কেঁপে উঠবে আপনারও! আর যাদের গোটা জীবনের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এই বাড়ির সঙ্গে তারা এই ধ্বংসস্তুপের মাঝেও আশার আলো দেখছেন। অনন্ত বাঁচবে পারিবারিক সম্পর্ক গুলি।