অরুণ, এতো তাড়া ?

কলমে দেবব্রত সরকার

এতো তাড়াতাড়ি চলে যাবার তাড়া ছিল তোমার ? কই, আমাকে বলোনি তো একবারও I প্রায় চার দশকের সম্পর্ক আমাদের I তুমি তোমার পেশায় সবসময় থাকতে স্থির, অবিচল I ময়দানের সমস্ত হাঁড়ির খবর ছিল তোমার নখদর্পনে I তোমার কলমে সময় সময় সেগুলো পরিস্ফুট হতো I একটি মহিরুহু যেমন তার ছায়ায় ছোট গাছগুলোকে রক্ষা করে বড় হতে সাহায্য করে, তুমি ছিলে সেরকমই একজন I তোমার ছায়ায়, তোমার আদর্শে, তোমার কাজের মধ্যে দিয়েই বহু নব্য সাংবাদিক নিজেদেরকে আজ পরিপূর্ণ করেছে I আমি জানি, এটাতেই তুমি পরিতৃপ্তি পেতে I তুমি ছিলে অজাতশত্রু, মহৎ হৃদয়ের একজন মানুষ I

তোমার মনে আছে, সেই দিনগুলোর কথা, প্রায় যখন রাত দেড়টা থেকে শুরু হতো আমাদের মধ্যে টেলিফোনের কথোপকথন I ময়দানের পুরোনো-নতুন গল্পের আড্ডা কখন যে রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে যেত আমরা বুঝতেই পারতাম না I কত স্মৃতি, কত কথা মনের ভিতরে ভিড় করে আসছে I

২০০৫ এ কোনো একটি ক্লাবের নির্বাচনে আমার যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব এসেছিলো ডান-বাম উভয় দলের নেতৃত্ব থেকে I আমি তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম এর ভিতরে আমার থাকা উচিত না I তুমিও আমাকে বারবার করে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলে I অবশেষে তুমিই কিন্তু জিতেছিল, তোমার কথাতেই যুক্ত হয়েছিলাম – বাকিটা ইতিহাস I

২০১১ তে আমাদের ক্লাবের নির্বাচন – সেবার খুব কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি আমরা I আমার মনে আছে তার আগের দিনের পত্রিকাতে আমাদের কাজের সমালোচনা করে তোমার লেখা I আমি জানতাম, প্রত্যেকের কাজের পরিধি নিজের কাছে – আমার কাজ আমি করবো, তোমার কাজ তুমি করবে I সেখানে কোনো সমালোচনা থাকে না I কয়েকদিন পর তুমি নিজেই উত্থাপন করলে, “কিছু বললে না যে?” আমি বলেছিলাম, “আমি জানি আমি কি করছি, আমি সঠিক পথে কাজ করি, তাতে যদি কেউ সমালোচনা করে, প্রত্যুত্তর দিতে নেই, তাতে নিজের কাজের ক্ষতি হয় “I তুমি সেদিন বলেছিলে, “আমি জানি তুমি সমালোচনাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে নতুন রাস্তা নেওয়ার কথা ভাবো, তাই তোমাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্যই আমার এই লেখা I

এরকমই অনেক ঘটনার কথা আজ মনে হচ্ছে – লিখতে গেলে পাতার পর পাতা শেষ হয়ে যাবে I এই তো সেদিন, আগস্টে আমাদের ১০৪ তম প্রতিষ্ঠা দিবসে তোমাকে আমরা সেরা সাংবাদিকের সম্মানে সম্মানিত করলাম I তুমি সেদিন খুব অসুস্থ ছিলে, আমি জানি, কিন্তু ভালোবাসার টান তোমাকে আমাদের মধ্যে নিয়ে এসেছিলো I

বেশ তো ভালো হয়ে যাচ্ছিল তুমি, হঠাৎ করে কি যে হলো, কেনো এতো তাড়া তোমার I এই বিশ্বজগতে একটাই চিরন্তন নিশ্চিত সত্য – ‘মৃত্যু’I কিন্তু এই চিরন্তন সত্য টাকে এতো তাড়াতাড়ি তুমি গ্রহণ করবে আমি কল্পনাতেও আনতে পারি নিI

তোমাকে নিয়ে যে এভাবে লিখতে হবে, এটা ভাবিনি কখনো I তুমি যেখানেই থেকো, শান্তিতে থেকো, ভালো থেকো I তোমার এই অকালে চলে যাওয়া ময়দানের ক্রীড়া সাংবাদিক মহলে অপূরণীয় এক শ্যূনতা তৈরি হল I এ সহজে পূরণ হবার নয় I

তোমার শোকস্তব্ধ পরিবারকে সমবেদনা জানাই, তোমার সাথে যেমন আমরা ছিলাম, তোমার পরিবারের পাশে ও আমরা সবসময় থাকবোI