এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : আর এক দিনের অপেক্ষা। গতকাল ফুটবলের রণক্ষেত্রে নেমে পড়বে বাংলার দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব এটিকে মোহনবাগান এবং এসসি ইস্টবেঙ্গল | এই ম্যাচ ঘিরে গোটা বাংলা দুই ভাগে হয়ে যায় সারা দিনের জন্য| পাড়ায় পাড়ায় আড্ডায় শুরু হয়ে গিয়েছে বিতর্কও।
সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা যেখানে রয় কৃষ্ণা, হুগো বৌমোস, প্রীতমদের নিয়ে গলা ফাটাচ্ছেন, সেখানে লাল-হলুদ সমর্থকেরা বলছেন, ড্যানিয়েল চিমা বড় ম্যাচে জ্বলে উঠবে। বোঝাই যাচ্ছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দী দল মাঠে নামার আগেই দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে তাদের দল নিয়ে তর্ক বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই।
সবুজ মেরুন শিবিরে কী চলছে, কে কী বলছেন, তা তো আগেই জানা হয়ে গিয়েছে। এবার ডার্বি নিয়ে মুখ খুললেন এসসি ইস্টবেঙ্গল দলের হয়ে প্রথম ম্যাচের গোলদাতা পর্চে। ক্রোয়েশিয়া থেকে আসা লাজিওর প্রাক্তন সেন্টার ব্যাক ক্লাবের ওয়েবসাইটে বলেছেন, “প্রতিটা বলের জন্য লড়াই করব আমরা। নিজেদের উজাড় করে দেব।”
গোল করে দলকে এগিয়ে দিলেও রবিবারের ম্যাচ দল জিততে না পারায় মন খারাপ দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডারের। বললেন, “শেষবার গোল করেছিলাম গত ডিসেম্বরে সাইপ্রাসের ক্লাব এসি ওমানিয়ার হয়ে। সেই ম্যাচটায় ১-০ গোলে জিতেছিলাম। সে দিন জামশেদপুরের বিরুদ্ধে গোল করেও ভেবেছিলাম জিতব। কিন্তু তা হল না। আসলে আমাদের অনেক জায়গাতেই আরও উন্নতি করতে হবে। প্রত্যেকেরই ভুল হয়। কিন্তু আমরা যথেষ্ট পরিশ্রম করে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা এখন শুধু এই ম্যাচটা নিয়েই ভাবছি এবং আমরা জানি, সমর্থকদের কাছে এই ম্যাচটা কী। তাদের জন্য ম্যাচটা জিততে হবে আমাদের। আশা করি শনিবার রাতে আমরা একসঙ্গে জয়ের আনন্দ উদযাপন করব।”
তবে যাঁর ওপর অনেক প্রত্যাশা ছিল এসসি ইস্টবেঙ্গল জনতার, সেই ড্যানিয়েল চিমা প্রথম ম্যাচে তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। তবে ডার্বিতে নিজের সেরাটা জন্য তৈরি হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ‘ছোট চিমা’। এসসি ইস্টবেঙ্গলের ইউটিউব চ্যানেলে তিনি জানিয়েছেন, “ডার্বির কথা ভাবলে সবার আগে যুদ্ধের কথা মনে আসে। আমি যতটা পারব দেব। সব শক্তি, ক্ষমতা নিঙড়ে দেব। কারণ, এটাই সবচেয়ে বড় ম্যাচ।”
গতবার যিনি এটিকে মোহনবাগানের গোল সামলেছিলেন ও গোল্ডেন গ্লাভস খেতাবও পেয়েছিলেন, সেই অরিন্দম ভট্টাচার্যের কাছে এই ম্যাচটা আসলে মান-সন্মানের লড়াই। সবুজ-মেরুন শিবির ছেড়ে এই মরশুমের আগে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের শিবিরে যোগ দিয়েছেন এই তারকা গোলকিপার। এসসি ইস্টবেঙ্গল শুধু যে তাঁকে সাদরে নিজেদের শিবিরে নিয়ে এসেছে, তা-ই নয়, সারা মরশুমের জন্য অধিনায়কের ব্যান্ডও দিয়ে দিয়েছে। সেই অরিন্দম বলছেন, “এই ম্যাচটা আমাদের কাছে খুব স্পেশ্যাল। দলের ভারতীয় ফুটবলাররা খুব ভাল করেই জানে এই ম্যাচে কতটা তীব্রতা ও উত্তেজনা থাকে। বিদেশি ফুটবলারদেরও বুঝিয়ে চলেছি এই ম্যাচের গুরুত্ব। আমরা এই ম্যাচে নামার অপেক্ষায় রয়েছি। নিজেদের প্রস্তুতও করেছি ভাল ভাবে।”
ডার্বির গুরুত্ব কতটা, তা খুব ভাল করেই বুঝেছেন বলে জানালেন পর্চে। বলেন, “আইএসএলের সব ম্যাচই আমি দেখি। প্রায় প্রতি ম্যাচের বিরতিতেই ডার্বি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমাদের দলের ভারতীয় খেলোয়াড়রা সব সময়ই এই ম্যাচ নিয়ে, এটিকে মোহনবাগান নিয়ে আলোচনা করছে। বুঝতে পারছি এই ম্যাচটা কতটা তাৎপর্যপূর্ণ। শুধু কলকাতার মানুষের কাছে নয়, সারা ভারতের কাছে।”
এটিকে মোহনবাগান দলের আক্রমণে রয় কৃষ্ণা, হুগো বৌমোস, লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিংয়ের চতুর্ভুজ প্রথম ম্যাচেই জানান দিয়ে দিয়েছে, তারা কী করতে পারে। ডার্বিতে এই চারজনকে সামলানোর কাজটা করতে হবে পর্চেকেই। কী ভাবে সামলাবেন? “ওদের আক্রমণ বিভাগ সত্যিই খুব ভাল। কিন্তু আমাদেরও রক্ষণ বিভাগ যথেষ্ট শক্তিশালী। হ্যাঁ, লড়াইটা বেশ জমজমাট হবে। আমরা ওদের মুখোমুখি হতে তৈরি। একশো শতাংশ দেব আমরা। প্রতিটা বলের জন্য লড়ব। ফুটবলে যে কোনও কিছু ঘটতে পারে। কিন্তু আমরা সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য কোনওমতেই হাল ছাড়ব না।”
বোঝাই যাচ্ছে ম্যাচ শুরুর আগেই ক্রমশ বেশ জমে উঠছে উত্তেজনার পারদ| এবার দেখার শনিবারের বড় ম্যাচ কোন দল জিতে তাদের সমর্থকদের মুখে হাসি ফোঁটাতে পারে|