নিজস্ব প্রতিনিধি : হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রীটের বিখ্যাত ব্যানার্জি পরিবারে দুই ভাইয়ের লড়াই অনেক আগেই প্রকাশ্যে চলে এসেছিল। এবং সেটা অবশেষে রবিবার মঞ্চস্থ হল মধ্য কলকাতার পাঁচতারা হোটেলে। বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোশিয়েসনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ময়দান উত্তাল হয়ে ওঠে। তবে শেষ পর্যন্ত আসন ধরতে রাখতে পারলেন না ব্যানার্জি পরিবারের 'বড় দা' অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়। 'ছোট ভাই' স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে হেরে গেলেন। ৬১'টি ভোটের মধ্যে ৩৭'টি পেয়েছেন স্বপন। অন্যদিকে অজিতের ঝুলিতে এল ২৪'টি ভোট। ফলে মাত্র ১৩ ভোটের ব্যবধানে হেরে সভাপতি পদ খোয়ালেন ব্যানার্জি পরিবারের 'বড় দা'। আর এই জয়ের সুবাদে চার বছর পরে বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়'কে নতুন সভাপতি হিসেবে পেল বিওএ। এবং পুরো প্যানেলসহ জিতেই স্বপন জানিয়ে দিলেন যে তাঁর 'দিদি' মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গিয়ে তাঁর প্রণাম নিতে চান। সাংবাদিক সম্মেলনে স্বপন বলেছেন, "আমি সবসময় দিদি'কে মায়ের মত দেখি। তাই ওনাকে প্রণাম করতে যেতে পারি। এর বাইরে আর কিছু না। কিন্তু দিদি আমার ও দাদা'র ব্যাপারে কোনওদিন মাথা ঘামাবেন না।"
নির্ধারিত ৬৪'টি আসনের জন্য ৬১ জন এদিন ভোট দেন। পল্টু রায় চৌধুরী ইলেকশন অবজারভার হিসেবে কাজ করেছেন। তাই তিনি ভোট দেননি। শেখর রায় চৌধুরী কোভিডে আক্রান্ত। এবং অজিত বাবুর ঘনিষ্ট ইন্দ্রজিৎ সেন নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য আদালত পর্যন্ত গিয়েছিলেন। তাই তিনিও ভোট দেননি। সচিব পদেও জিতলেন স্বপন বন্দোপাধ্যায়ের দেওয়া প্রার্থী জহর দাস। তিনি বিশ্বরূপ দে'কে ১৫ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দিলেন। জহরের প্রাপ্ত ভোট ৩৮। অন্যদিকে একদা সিএবি ও আইএফএ থেকে বিতাড়িত বিশ্বরূপ পেলেন মাত্র ২৩ ভোট। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংস্থার কোষাধ্যক্ষ হিসেবে রয়ে গেলেন রূপেশ কর। অবশ্য শেষ মুহূর্তে টাই হওয়ার জন্য 'প্রক্সি ভোট'এ জিতে সহ-সভাপতি হিসেবে থাকলেন অজিত ঘনিষ্ঠ চন্দন রায় চৌধুরী। জয়ের পর স্বভাবতই উড়ল সবুজ আবীর। রজনীগন্ধা ফুলের মালা ও রসগোল্লা দিয়ে সেলিব্রেশন তো ছিলই, ছোট ভাই বাবুন'ও দাদা অজিত'কে মালা পড়িয়ে দিলেন। হারের পরেও ভাইকে মিষ্টিমুখ করালেন বড় দাদা।
এরপর ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে 'ছোট ভাই' বাবুন'কে ভবিষ্যতের জন্য শুভেচ্ছা জানালেও, প্রাক্তন বিওএ সভাপতির বডি ল্যাঙ্গুয়েজে হারের ছাপ স্পষ্ট। হোটেল ছাড়ার আগে তিনি বলে যান, "যারা জিতেছে তাদের প্রতি আমার শুভেচ্ছা রইল। আশাকরি ওনারা সংস্থাকে ভালভাবে চালিয়ে নিয়ে যাবে। আমার সিদিচ্ছা সবসময় তাদের সঙ্গে আছে।" একইসঙ্গে 'ছোট ভাই' সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, "ভালভাবে কাজ করার জন্য আশাকরি ও নিজেকে তৈরি করবে। এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে সংস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।"
নির্বাচিনের আগে 'দাদা' সম্পর্কে প্রকাশ্যে গরমাগরম বক্তব্য রেখেছিলেন বাবুন। তবে এদিন আর কটাক্ষ করার রাস্তায় হাঁটলেন না। বরং ঘরে ফিরে 'কষা মাংস' খেয়ে সেলিব্রেশন করতে চান সদ্য বিওএ সভাপতি! তাঁর প্রতিক্রিয়া, "দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক বরাবরের মত একইরকম থাকবে। কিন্তু চেয়ারের মূল্য চেয়ারের জায়গায়। সেই মূল্যটা পেয়ে গিয়েছি। সেই চেয়ারের মূল্যে দাদা আমাকে মিষ্টি খাইয়েছে। আমিও দাদাকে মিষ্টিমুখ করিয়েছি। বাড়িতে গিয়ে এবার জমিয়ে কষা মাংস খাব।"
সবই হল। একটা সংস্থার কয়েকটা চেয়ারকে নিয়ে গৃহ যুদ্ধ প্রকাশ্যে এল। যার জন্য তোলপাড় হল ময়দান। তবে এবার তো কাজ করার সময়। সভাপতি স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু তাঁর স্বপ্নের প্রজেক্টগুলোর কথা জানিয়ে দিলেন। শেষে সভাপতি যোগ করেছেন, "স্ট্যান্ড রোডের জমিতে প্রথমে কিছু কাজ করতে চাই। এছাড়া অলিম্পিক গেমস ভিলেজ করা ছাড়াও হকির অ্যাস্ট্রো টার্ফ নিয়ে অনেক বছর ধরে সমস্যা চলছে। সেই সমস্যা দ্রুত মিটিয়ে ফেলার পাশাপাশি কয়েকটি অ্যাসোশিয়েসনের মধ্যেও ব্যাপক ঝামেলা আছে। রয়েছে একাধিক আলাদা সংস্থা। সেগুলো এবার এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার সময় এসেছে।"