এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : নাকতলার সেই বাড়িটি, যেখানে জন্ম ভারতীয় ফুটবলের দিয়েগো মারাদোনার। আটের দশক জুড়ে সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে ফুটবলে লাল-হলুদ, সবুজ-মেরুণ রঙ ছড়িয়েছেন। চির বসন্তের সেই মানুষটির নাম কৃষাণু দে।
বাঙালি আত্মবিস্মৃত জাতি, একথা আলোচনা হয় যুগ যুগ ধরে। আর সেই কারণেই বোধ হয়, কৃষাণু দের সেই বেড়ে ওঠা বাড়ি, তার শৈশব-কৈশোর-যৌবন দেখেছে যে বাড়ি, সেই ভিটেমাটিকে আমরা রক্ষা করতে পারি না। তার বেড়ে ওঠা থেকে চলে যাওয়া দেখেছে যে বাড়িটি, আমরা রক্ষা করতে পারি না।
আমরা গিয়েছিলাম ২৮/৩ খানপুর রোডে, সেই বাড়িটির আজ ভগ্নপ্রায় দশা। অথচ এই বাড়িতেই বাংলা ফুটবলের তাবড় তাবড় ব্যক্তিত্বরা এসেছেন কৃষাণু দেকে সই করিয়ে নেওয়ার জন্য। ছেলে সোহম দে ঘুরিয়ে দেখালেন পুরো বাড়িটা, দেখালেন তার বাবার ছোটবেলা থেকে বড় হয়ে ওঠার স্বাক্ষী থাকা সব ঘর। এরপর চলে গেলাম সেই বাড়ির ছাদে, যেখানে চোটের সময়ে নিজেকে ফিট করার কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন কৃষাণু। সেই ছাদের পাশের গাছে ঝুলছে কাঁচা আম। আর সেখানে এই বাড়িটা নিয়ে নস্টালজিক হয়ে পড়লেন ছেলে সোহম।
সোহম জানালেন, বাড়ি ভেঙে ফ্ল্যাট তৈরি করা হলেও সেখানেও থাকবে কৃষাণু দের অসংখ্যা স্মৃতি, যা ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীদের কাছে স্মৃতিবিজরিত হয়ে থাকবে সব সময়ে।
তবে এই বাড়ি ভাঙা নিয়ে যার মন সব থেকে খারাপ, তিনি হলেন পনি দে, প্রয়াত কৃষাণু দের স্ত্রী। আজও আঁকড়ে ধরে রয়েছেন সেই কার্টিলেজটি, যা ছিল কৃষাণু দের। সেই কার্টিলেজেই যেন খুঁজে পান তার রন্টুকে। আমাদের দেখালেন সেই সময়ের 'টোকেন', যা তখনকার দিনে দলবদলের সময়ে ব্যবহৃত হত। আর সেই গলার তাবিজ, যা পড়ে খেলতেন কৃষাণু দে। বাড়িটা নিয়ে কত স্মৃতি রয়েছে পনি দেবীর, সেই বাড়ি আজ ধূলিসাৎ হওয়ার পথে। তার আগে স্মৃতিগুলি ফের উলটে পালটে নিচ্ছিলেন পনি দেবী।
কৃষাণু দে আজও ফুটবলপ্রিয় বাঙালির কাছে সেন্টিমেন্ট। যারা ৮০-৯০ এর দশকে ফুটবল দেখেছেন, তাদের কাছে কৃষাণু দে আজও অমর, আজও সেরা। তার স্মৃতিতে ২০১৭ সালে পাটুলি মোড়ে একটি বড় মূর্তি, আর হালেই গত মার্চ মাসে সেই পুরোনো বাড়ির কাছে আবক্ষ মূর্তি উন্মোচিত হয়েছে। কিন্তু নতুন প্রজন্মের কাছে কৃষাণু দেকে পৌঁছে দেওয়ার বড় সম্বল সেই বাড়িটা আধুনিকতার চাপে ধূলিসাৎ হওয়ার পথে।