এক্সট্রা টাইম নিউজ ডেস্ক : একেই বলে আক্ষরিক অর্থে মরেও 'শান্তি না পাওয়া'। দিয়েগো মারাদোনা'র ক্ষেত্রেও সেটাই হচ্ছে। মৃত্যুর পরেও তাঁর আত্মা হয়তো শান্তি পাচ্ছে না। কারণ, 'ফুটবল দেবতা'র সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ চরমে গিয়েছে। সেই সম্পত্তির লড়াইয়ের জন্য এখন কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন আইনজীবীরা। পরিবার ও তাঁর বন্ধুদের মধ্যে জোর লড়াই লাগতে চলেছে। দিয়েগো মারাদোনার সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে। ফলের আদালতে দাবি উঠেছে, প্রমাণ সংগ্রহের জন্য দরকার হলে দিয়েগো'র কবর খোঁড়া হোক! ভাবা যায়!
গত ২৫ নভেম্বর অমৃতলোকে চলে গিয়েছেন দিয়েগো। ওয়াকিবহাল মহলের মতে প্রয়াত মারাদোনার সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১ থেকে ৪ কোটি ডলার। আর এই বিপুল সম্পত্তির নতুন মালিক কে হবেন, সেটা নিয়েই এখন আসরে নেমেছেন শুধু মারাদোনার ছেলে-মেয়ে, প্রাক্তন স্ত্রী-বান্ধবীরা। শুধু তাই নয়। তাঁদের সঙ্গে এই লড়াইয়ে নামতে চলেছেন আর্জেন্টিনার সাংবাদিক, চিত্রগ্রাহকরাও! এখনও পর্যন্ত মারাদোনার সম্পত্তির সঠিক পরিমাণ জানা যায়নি। ফোর্বস পত্রিকার বিচারে সেটা ১ থেকে ৪ কোটি ডলার। এর মধ্যে রয়েছে জমি, বাড়ি, বিলাসবহুল গাড়ি, গয়না। যেসব দেশে তিনি খেলেছেন, বা কোচিং করিয়েছেন, বা অন্য কোনওভাবে যুক্ত ছিলেন, সেই আর্জেন্টিনা, স্পেন, ইটালি, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, বেলারুশ, মেক্সিকোয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এইসব সম্পত্তি।
মারাদোনা নাকি কোনও উইল করে যাননি। ফলে সমস্যা আরও বেড়েছে। আর্জেন্টিনা সরকারের আইন অনুযায়ী একজন তাঁর উইলে সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ স্ত্রী-সন্তান ছাড়া বাকিদের মধ্যে ইচ্ছেমত ভাগ করে দিতে পারেন। কিন্তু দুই তৃতীয়াংশ স্ত্রী-সন্তানদের জন্য রাখতেই হবে। যেহেতু মারাদোনার কোনও উইল নেই, সম্পত্তির লড়াইটা আরও কঠিন হয়েছে। দিয়েগো'র মৃত্যুর পর যাঁরা নিজেকে মারাদোনার সন্তান বলে দাবি করছেন, জীবদ্দশায় মারাদোনা তাঁদের কখনও স্বীকৃতি দেননি। তাই তাঁরা যদি সম্পত্তির জন্য ভবিষ্যতে মামলা করেন, তাহলে 'ভিসেরা টেস্ট'এর জন্য আর্জেন্টাইন লেজেন্ডের কবর পর্যন্ত খোঁড়া হতে পারে। কারণ, ডিএনএ পরীক্ষার জন্য মারাদোনার শরীরের নমুনা প্রয়োজন। এবং তাঁর কবর খোঁড়ার দাবি ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে।
গত কয়েক বছর ধরে মারাদোনার আইনজীবী কাজ করছেন মরিসিও দালেসান্দ্রো। তিনি বলেছেন, "মারাদোনার সম্পত্তির ভাগ কতজন চাইবেন, সেটা জানা নেই। তবে তালিকা লম্বা হলে অবাক হব না।" এরপরেই তিনি যোগ করেন, "আমার ধারণা মারাদোনার বিরুদ্ধে খুব কম করে হলেও ৬০টি মামলা উঠবে আদালতে। এর অধিকাংশই অবশ্য মানহানির মামলা। যেগুলো এখনও ঝুলে রয়েছে। বিভিন্ন সাংবাদিক, ফটোগ্রাফাররা বিভিন্ন সময়ে ঠোঁটকাটা মারাদোনার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিলেন। এবার তাঁরাও হয়তো মারাদোনার সম্পত্তির ভাগ চাইবেন। কারণ, এই টাকার অঙ্কটা কম নয়!"
এবার দেখে নেওয়া যাক কারা মারাদোনার সম্পত্তির দাবি জানাতে পারেন। এদের মধ্যে রয়েছেন স্বীকৃত পাঁচ সন্তান। তাঁদের চারজন আর্জেন্টিনায় থাকলেও, একজন থাকেন ইতালিতে। তালিকা কিন্তু এখানেই শেষ নয় আছেন আরও ছয়জন, যাঁরা বিভিন্ন সময় নিজেদের মারাদোনার সন্তান বলে দাবি করেছেন। যদিও অতীতে দেওয়া একাধিক ইন্টারভিউ'তে জিয়ানিনা (৩১) ও দালমা'কেই (৩৩) সন্তান হিসেবে মেনেছেন '৮৬'র বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক। এই দুজনই মারাদোনার প্রাক্তন স্ত্রী ক্লদিয়া ভিলাফেনের সন্তান। দীর্ঘ ২০ বছরের বিবাহিত জীবন কাটানোর পর ২০০৩ সালে ক্লদিয়ার সঙ্গে মারাদোনার বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
যদিও এরপর কয়েকটি ইন্টারভিউ'তে আরও ছয় সন্তানের কথা স্বীকার করেন 'হ্যান্ড অফ গড'। এই ছয়জনের মধ্যে চারজন রয়েছেন কিউবায়। দুজন আর্জেন্টিনায়। রয়েছেন প্রাক্তন স্ত্রী ও একাধিক বান্ধবীরাও। আর তাই মারাদোনার মৃত্যুর পর তাঁর সম্পত্তির দাবি জানিয়ে এবার আসরে নামলেন আরও দুই সন্তান সান্তিয়াগো লারা (১৯) এবং মাগালি গিল (২৩)। দুজনেই বলেছেন, তাঁরা নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠা করার জন্য আইনী রাস্তায় হাঁটবেন নামবেন।
কোনও মানুষের মৃত্য ঘটলে আমরা ‘রেস্ট ইন পিস’ লিখে থাকি। যাতে তাঁর আত্মা শান্তি পায়। তবে দিয়েগো বোধহয় মরেও শান্তিতে নেই। যে মানুষটা তাঁর বাঁ পায়ের জাদুতে গোটা ফুটবল দুনিয়াকে এক ছাতার তলায় নিয়ে এসেছেন, যিনি তাঁর দারুণ ম্যানারিজম দিয়ে সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছেন, তারই কিনা এমন করুণ পরিণতি! আক্ষরিক অর্থেই ওঁর মরেও শান্তি নেই!