নিজস্ব প্রতিনিধি : অন্যদিনের মত শুক্রবার রাতেও জলন্ধরের ধুরা গ্রামের বাড়িতে টেলিভিশনের সামনে ভিড় জমেছিল। হুইলচেয়ারে বসে টিভির পর্দায় এটিকে মোহনবাগান বনাম হায়দ্রাবাদ এফসি'র ম্যাচটা খুব মন দিয়ে দেখছিলেন পঞ্জাবের এক প্রাক্তন ফুটবলার৷ ৫৪ মিনিটে ছেলেটা গোল করতেই হাসি ফুটে উঠল তাঁর মুখে। তবে তাঁর ছেলের জন্য মোহনবাগান পেনাল্টি হজম করতেই ফের কান্নায় ভেঙে পড়লেন ৫১ বছরের কুলদীপ সিং৷ কারণ, জেতা ম্যাচটা যে ড্র হয়ে শেষ হল।
যদিও কুলদীপ সিং মনে করেন ৯০ মিনিটের যুদ্ধে এমন ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি হতেই পারে। আর তাই ছেলের এই উন্নতিতে বেশ গর্বিত এই প্রাক্তন ফুটবলার। এক্সট্রা টাইম'কে কুলদীপ বলছিলেন, "প্রতি ম্যাচের পরেই মনবীরের সঙ্গে আলোচনা হয়। তবে গতকাল ম্যাচের শেষে ও বেশি কথা বলার মেজাজে ছিল না। অল্প সময় কথা হলেও বারবার পেনাল্টি'র কথা বলে যাচ্ছিল। আসলে ও নিজেকে ক্ষমা করতে পারছে না।" এরপরেই যোগ করলেন, "আসলে ওই সময় এত কিছু হিসেবনিকেশ করা যায় না। বাইরে বসে মন্তব্য করা খুব সহজ। তবে নিখিল পূজারীকে বক্সে ফাউল করার জন্য রেফারি লাল কার্ড দিলে তো আরও বড় সর্বনাশ ঘটে যেত। সেটাও ভেবে দেখতে হবে। তাই যে যাই বলুক, আমি কিন্তু ছেলের জন্য গর্বিত। নিজের তাগিদে আজ ও সবার কাছে পরিচিতি পেয়েছে। এটাও মাথায় রাখা জরুরি।"
বাবা সান্তনা দিলেও মন খারাপ নিয়েই গোয়ার ফতোরদা স্টেডিয়াম ছাড়লেন মনভীর। দলকে না জেতানোর যন্ত্রণা তো ছিলই, এরসঙ্গে যোগ হয়েছে বাবার যন্ত্রণা। মনবীরের বাবা কুলদীপ পাঞ্জাবের সন্তোষ ট্রফি খেলা ফুটবলার৷ জাতীয় শিবিরে গিয়েছিলেন৷ ডাক পেয়েছিলেন কলকাতার ক্লাবেও৷ কিন্তু পঞ্জাব বিদ্যুৎ পর্ষদের চাকরি ছেড়ে আসতে পারেননি৷ কয়েক বছর আগে হাইভোল্টেজ লাইনে কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় তাঁর হাত কাটা গিয়েছে৷ পক্ষাঘাতে হাঁটতেও পারেন না৷ তবে এই মুহূর্তে মনবীরের আক্ষেপ শুধু বিপক্ষকে পেনাল্টি দেওয়ার জন্য।
এই প্রথমবার শুরু থেকে মাঠে নেমেছিলেন ডার্বি যুদ্ধের গোলদাতা। হেড কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস তাঁর প্রতি ভরসা দেখালেও, দলকে জেতাতে পারলেন না। তাই তো ম্যাচের শেষে মন খারাপ নিয়ে সবুজ-মেরুনের তরুণ স্ট্রাইকার বলছিলেন, "গোল করার জন্য ভাল লাগলেও, এই মুহূর্তে মন ভাল নেই। কারণ, আমার ভুলের জন্যই ওরা পেনাল্টি থেকে গোল করে গেল। ফলে ম্যাচ ড্র হয়। তাছাড়া আমি অনেকগুলো গোলের সুযোগ নষ্ট করেছি। তবে আমাকে এই ভুলগুলো দ্রুত শুধরে নিতে হবে। যাতে আগামী ম্যাচে দলকে জেতাতে পারি। আর সেইজন্য অনুশীলনে আরও কঠোর পরিশ্রম করব।"
এই মুহূর্তে মনবীর ভারতীয় ফুটবলের উদীয়মান তারকা। তবে শুরুটা এমন ছিল না। ২০১৭-১৮ মরসুমে তাঁর গোলেই সাত বছর পর সন্তোষ ট্রফি জিতেছিল বাংলা। সেবার জয়ী দলের কোচ ছিলেন মৃদুল ব্যানার্জি। সেই মৃদুলবাবু টেলিফোনে বলছিলেন গত ম্যাচে মনবীরের ক্ষনিকের ভুলের জন্য সবুজ-মেরুন ড্র করলেও, ২৫ বছরের ছেলেটার শুধু উত্তোরণই ঘটবে। কারণ, ওর ওয়ার্ক এথিক্স বড্ড ভাল।
মৃদুলের মতে, "দেখুন ৯০ মিনিটের খেলায় এমন ভুল আখচার হয়। ব্যাপারটার সঙ্গে মনবীর জড়িয়ে আছে বলে এত আলোচনা হচ্ছে। তবে এই ভুলটা তো ওর বদলে কোনও ডিফেন্ডার'ও করতে পারত। সেটাও তো ভাবনাচিন্তা করা জরুরি। তাই আমার মতে এটা নিয়ে আলোচনা না করাই ভাল। মনবীর এই মুহূর্তে দেশের সেরা স্ট্রাইকারদের মধ্যে একজন। এবং আমার বিশ্বাস ওর উত্তোরণ ঘটবে। শুধু তাই নয়। হাবাস ওকে ভবিষ্যতে আরও সুযোগ দেবেন।"