এক্সট্রাটাইম নিউজ ডেস্ক : সালটা ১৯৪৭। প্রায় ২০০ বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খলামুক্ত হয়ে নিজের স্বাধীন পরিচয় অর্জন করেছে ভারতবর্ষ। আর তার পরের বছই প্রথমবার স্বাধীন ভারত হিসেবে অলিম্পিকের মঞ্চে নেমেছিল হকি দল। এদেশে এত বছর রাজত্ব করা ইংল্যান্ডকে তাদেরই মাটিতে পরাস্ত করে সোনা ঘরে তুলেছিল ভারতীয় দল। লন্ডনে উড়েছিল তেরঙ্গা। আর সেই দলেরই অন্যতম সদস্য ছিলেন বলবীর সিং দোসাঞ্জ। যিনি বলবীর সিং সিনিয়র হিসেবেই বেশি পরিচিত। ১৯৪৮ সালে অলিম্পিকের সেই ঐতিহাসিক ফাইনালে ৪-০ গোলে জিতেছিল ভারত। জোড়া গোল করেছিলেন এই সেন্টার ফরোয়ার্ড। সেই কিংবদন্তির প্রয়াণে ভারত তথা বিশ্ব হকিতে বিরাট শূন্যস্থান তৈরি হল। অবসান ঘটল ভারতীয় হকির স্বর্ণযুগের।
তাঁর প্রয়াণে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, দেশের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দ ও কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। সঙ্গে রয়েছে আরও বিখ্যাত ব্যাক্তিত্বদের নাম। শচীন তেন্ডুলকর, বিরাট কোহলি, অভিনব বিন্দ্রা, পিটি ঊষা থেকে শুরু করে টিম ইন্ডিয়ার কোচ রবি শাস্ত্রী, বলিউডের সুপারস্টার অক্ষয় কুমার স্মৃতির সরণিতে ডুব দিয়েছেন।
ট্যুইটারে মোদি লেখেন, "পদ্মশ্রী বলবীর সিং সিনিয়রকে তাঁর পারফরম্যান্সের জন্য মানুষ আজীবন মনে রাখবে। দেশকে গর্বিত করেছেন তিনি। অনবদ্য হকি তারকা তো ছিলেনই, দারুণ মেন্টরও ছিলেন তিনি। তাঁর প্রয়াণে শোকাহত। পরিবার এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের জানাই সহানুভূতি।”
দেশের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দ তাঁর বার্তায় লিখেছেন, "বলবীর সিং সিনিয়রের প্রয়াণে গভীরভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি। অলিম্পিকে তিনবার সোনা জেতার পাশাপাশি পদ্মশ্রী পেয়েছেন দেশের সর্বকালের সেরা এই আ্যথলিট। ওনার ভাবনাচিন্তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তরুণ প্রজন্মকে আহ্বান জানাই। তাঁর প্রয়াণে শোকাহত। পরিবার এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের জানাই সহানুভূতি।" শোকবার্তায় একইরকম কথা লিখেছেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী কিরেণ রিজিজু।
তিনি ছিলেন সকলের কাছে অনুপ্রেরণা। আর সেই অনুপ্রেরণাকে ২৫ মে হারিয়ে শোকস্তব্ধ ক্রীড়াদুনিয়া। তাঁর সাফল্যই আগামীকে পথ দেখাবে বলে মনে করছেন ক্রীড়াবিদরা।
অলিম্পিকে একমাত্র সোনাজয়ী তারকা অভিনব বিন্দ্রা দুঃখপ্রকাশ করে লেখেন, "বিশ্বে তাঁর মত প্রতিভাবান অ্যাথলিট খুব কম জন্মায়। তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে চেনার সৌভাগ্য হয়েছিল বলে নিজেকে ধন্য মনে করি। গোটা দুনিয়ার উঠতি খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণা দেবে তাঁর সাফল্য।"
মাস্টার ব্লাস্টার শচীন তেন্ডুলকর লিখেছেন, "প্রয়াত বলবীর সিং সিনিয়রের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের গভীর সমবেদনা রইল। হকির মহাতারকার প্রয়াণে আমরা শোকস্তব্ধ। রেস্ট ইন পিস স্যার।"
ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি লিখলেন, "বলবীর সিং সিনিয়রের প্রয়াণে হতবাক হয়ে গিয়েছি। তাঁর প্রয়াণে শোকাহত। পরিবার এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের জানাই সহানুভূতি।"
যেকোনও বিষয়ে রবি শাস্ত্রীর বক্তব্য আলাদা মাত্রা যোগ করে। টিম ইন্ডিয়ার হেড স্যার লিখেছেন, "বলবীর সিং সিনিয়র। এক দারুণ যোদ্ধা। একাই গোটা মাঝমাঠ দেখে নেওয়ার ক্ষমতা রাখতেন। এক কথায় হকির লেজেন্ড। আপনার প্রয়াণে শোকাহত।"
২০১৮ সালে রিলিজ করেছিল 'গোল্ড' নামক হিন্দি সিনেমা। ১৯৪৮ সালের লন্ডন অলিম্পিকের প্রেক্ষাপটে এই সিনেমা তৈরি করা হয়েছিল। সত্যি ঘটনার সঙ্গে নূন্যতম সামঞ্জস্য না থাকার জন্য বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল এই সিনেমা। ইতিহাসকে বিকৃত করার জন্য নায়ক অক্ষয় কুমার ও পরিচালক রিমা কাগতি'কে অনেক বিতর্কের সম্মুখীন হতে হয়। তবুও সেই সিনেমা নির্মাণের আগে সদ্য প্রয়াত হকি লেজেন্ডের সঙ্গে সময় কাটান অক্ষয় কুমার। এদিন তিনি সেই ছবি পোস্ট করে ট্যুইটারে লিখেছেন, "বলবীর সিং সিনিয়রের প্রয়াণে আমি হতবাক। অতীতে ওনার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছি। তাই নিজেকে ধন্য মনে করি। ওনার পার্সোনালিটি তারিফ করার মত। ওনার পরিবারের প্রতি সমবেদনা রইল।"
দেশের বিখ্যাত আ্যথলিট পিটি ঊষাকে মেয়ের মত দেখতেন প্রয়াত বলবীর সিং। স্মৃতির আ্যলবাম ঘেঁটে 'গোল্ডেন গার্ল' ট্যুইটারে লিখলেন, "মন ভাল নেই। বলবীর সিং সিনিয়র নেই। এই খবরটা পাওয়ার পর থেকেই মনমেজাজ খুব খারাপ হয়ে আছে। একেবারে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি। ওনার মত চ্যাম্পিয়ন, ওনার মত আ্যথলিট আর পাওয়া যাবে না। খেলার প্রতি ওনার প্যাশন মনে রাখার মত। ওনার পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও গুণমুগ্ধদের প্রতি সমবেদনা রইল।"