এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্কঃ পোলিও কাড়তে চেয়েছিল শৈশব। নতুন জীবন গড়ে দেখালেন সালকিয়ার ছেলেটি। এ যেন জীবন যুদ্ধের জীবন্ত রূপকথা। সাত সমুদ্র পার করে বিশ্ব জয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন সালকিয়ার বিশেষ ভাবে সক্ষম সাঁতারু রিমো সাহা। সাঁতার বিভাগে পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ মেডেল জয়ী রিমো একদিন ইংলিশ চ্যানেল, ক্যাথলিনা চ্যানেল, নর্থ চ্যানেল পার করবেন তা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি। পোলিও রোগে আক্রান্ত রিমোর ডান পায়ের সমস্যার কারণে তাঁকে ডাক্তার সাঁতার শেখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আর সেখান থেকেই শুরু সাঁতরে সমুদ্র জয়ের রূপকথা।
হ্যাঁ রূপকথাই বটে! ঘন্টার পর ঘন্টা সাঁতার কেটে সমুদ্র পার করার কথা কোনো সাধারণ মানুষ দুঃস্বপ্নেও ভাবেন না। কিন্তু রিমো হাজারো বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হয়েও হাল ছাড়েননি। আর্থিক ভাবেও খুব একটা ভালো পরিস্থিতি নয় সালকিয়ার এই সাহা পরিবারের। তবুও একে একে পূরণ করছেন তাঁর স্বপ্নগুলি। আর তাঁর এই স্বপ্নের সাথি হয়েছেন তাঁর মা-বাবা এবং সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী।
আরও পড়ুন- বার্ষিক চুক্তির তালিকা প্রকাশ বিসিসিআইয়ের, শাস্তিস্বরূপ বাদ ঈশান, শ্রেয়াসরা
আগামী ৪ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি দেবেন রিমো। সেখানে দুটি চ্যানেল পার করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি সারছেন তিনি। তিনি সফল হলে প্রথম ভারতীয় হিসাবে এই নজির গড়বেন তিনি। তবে শুধু পরিবারের সমর্থনই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন বিপুল অর্থের। অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসে নিজেকেই অর্থ জোগাড় করতে হয়ে এমনটাই জানালেন রিমো। আর এই সমস্যার সমাধান নিয়েই রিমোর পাশে দাঁড়ালো শ্রাচী গ্রুপ।
প্রসঙ্গত সাম্প্রতিক সময় বাংলার ক্রীড়ামহলে বিভিন্ন ধরনের খেলায় ইনভেস্ট করেছেন শ্রাচী গ্রুপের ডিরেক্টর রাহুল টোডি। হকির জন্য বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় করেছেন তিনি, ইস্টবেঙ্গল ক্রিকেট দলের ইনভেস্টরও শ্রাচী। তবে এবার আরও একধাপ এগিয়ে গেলেন রাহুল টোডি। রিমোর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের স্পন্সর হল শ্রাচী গ্রুপ। বুধবার শ্রাচী টাওয়ারে রিমোকে জার্সি জ্যাকেট দেওয়ার পাশাপাশি যথাযথ সম্মান জানানো হল শ্রাচী গ্রুপের তরফে। আর্থিক সাহায্যের জন্য দেওয়া হল চেক।
ক্রিকেট ফুটবল এবং অন্যান্য খেলা ধুলায় ইনভেস্টরের রমরমা থাকলেও সাঁতারের ক্ষেত্রে চিত্রটা ভিন্ন। তবুও এগিয়ে এলেন রাহুল টোডি।
বাংলার মুখ উজ্জ্বল করা রিমো সাহার আর্থিক অনটনের সময় শ্রাচী গ্রুপের এই সাহায্যকে সম্মান জানাতে ভোলেননি রিমোর স্ত্রী এবং রিমোর বাবা।
রিমোর এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণার অন্যতম একজন হলেন তাঁর বাবা শঙ্কর সাহা। অন্যদিকে রিমো সাহার আজ বাংলা তথা ভারতের গর্ব হয়ে ওঠার পিছনে সবচেয়ে বেশি যার অবদান রয়েছে তিনি হলেন রিমোর মা। অর্থের অভাবে নিজের স্বপ্নকে যখন বিসর্জন দেওয়ার দোরগোড়ায় ছিলেন রিমো, সেই সময় নিজের সোনা গয়না বিক্রি করে ছেলেকে উৎসাহ জুগিয়েছেন তিনি। ছেলের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন শুক্লা দেবি।
এই চোখের জল আনন্দের, এই চোখের জল গর্বের, এই চোখের জল সেইসমস্ত দিন গুলির, যখন তিনি ছেলের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে সর্বস্ব ত্যাগ করেছিলেন। ছেলের প্রতিটি ইতিহাস রচনার সাক্ষী থাকেন শুক্লা দেবি, আর সেই ইতিহাস রচনার পিছনে লুকিয়ে থাকা কষ্টের যাত্রার কথা জানাতে গিয়েই আবেগপ্রবণ হয়ে যান তিনি।
বর্তমানে সাঁতার বিভাগে বাংলা অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে, এগিয়ে গিয়েছে বেঙ্গালুরু। তাই শুধু নিজের সাফল্যই নয় রিমো চান বাংলা থেকে উঠে আসুক আরও অনেক তরুণ প্রতিভা। বাংলার প্যারা সুইমারদের নিয়ে কাজ করতে চান তিনি।
সাত সমুদ্র জয় করুক রিমো সাহা এক্সট্রা টাইম বাংলার তরফে থাকলো অসংখ্য ভালোবাসা ও অভিনন্দন। বাংলার প্রকৃত নায়করা এভাবেই সাহায্যের হাত পেয়ে যাক শ্রাচী গ্রুপের মতো বড় বড় কোম্পানির থেকে, এই প্রার্থনাই করি আমরা।