নিজস্ব প্রতিনিধি : সোমবার বাদে প্রতিদিন ভোর ছটা নাগাদ আপনি যদি দমদম রোডের কাছে অটোস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকলে দেখবেন, এক বৃদ্ধ অটোর লাইনে দাঁড়িয়ে৷ সাতটা নাগাদ দমদম সেন্ট্রাল জেলের মাঠের পাশ দিয়ে গেলে দেখবেন , এক দল কিশোর ফুটবলারকে নিয়ে ব্যস্ত সেই প্রবীণ৷ তিনি নিখিল নন্দী। তবে এবার থেকে সেই ছবিগুলো আর চোখের সামনে ভেসে উঠবে না। কারণ, করোনা পরিস্থিতি ময়দানের আরও এক পরিচিত মানুষকে কেড়ে নিল। ৯১ বছর বয়সে চলে গেলেন প্রবীণতম অলিম্পিয়ান কোচ নিখিল নন্দী। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে একাধিক শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। অবশেষে মঙ্গলবার বিকেল ৩'টে নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই প্রাক্তন অলিম্পিয়ান।
ঠিক ষাট বছর আগে, ১৯৫৬ মেলবোর্ন অলিম্পিকে ভারত চতুর্থ হয়েছিল৷ অলিম্পিক ফুটবলে সেরা পারফরম্যান্সের সাক্ষী নিখিলবাবু৷ সেই সময়ের অলিম্পিয়ানরা অধিকাংশই প্রয়াত৷ করোনা ও বার্ধক্যজনিত কারণে অধিকাংশই ছিলেন গৃহবন্দি৷ তবে ব্যতিক্রমী চরিত্র ছিলেন নিখিল৷ এবার তিনিও থামলেন।
এখনও এই বয়সী কোনও অলিম্পিয়ান দেশে বাচ্চাদের কোচিং করাচ্ছেন বলে কোনও খবর নেই৷ সদ্য প্রয়াত নিখিলবাবু গত কয়েক বছর ধরে প্রায় দু’টো গ্রুপে পঞ্চাশজন কিশোরকে কোচিং করাতেন। শিক্ষার্থীদের কোনও টাকা দিতে হত না৷ ষাট বছর আগে ওই বহু আলোচিত অলিম্পিকে চতুর্থ হওয়ার পিছনে বড় ভূমিকা ছিল নিখিলের৷ তিনিই এক মোড়ের সাক্ষী৷ ঠিক আগের অলিম্পিকে যুগোস্লাভিয়া ১০ -১ গোলে হারায় ভারতকে৷ কোচ রহিম সাহেব টিম খেলাতেন ৩-২-৫ ছকে৷ বেশ ভয়েই তিনি ৪ ডিসেম্বর যুগোস্লাভদের বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল ম্যাচে পাল্টে দেন ছক৷ ৩-৩-৪৷ নিখিল নন্দীর মার্কিং করার ক্ষমতার জন্যই তাঁকে প্রথম টিমে আনা হয় মাঝমাঠে৷ ওই ম্যাচে ভারত ১-৪ হারে৷ কিন্তু রীতিমত প্রশংসা পায় স্ট্যানলি ম্যাথুসের৷ সে সময় অধিনায়ক বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়মিত সুযোগ পেতেন না৷ যুগোস্লাভ ম্যাচে প্রথম টিমেও ছিলেন না৷ মাঝমাঠে খেলেন নিখিল, নুর মহম্মদ, কেম্পিয়া৷ ফরোয়ার্ড লাইনে পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়, বলরাম, কিট্টু এবং নেভিল ডি ’সুজা৷
নিখিল নন্দী সেই বিরল পরিবারের লোক , যেখান থেকে চার ভাই ভারতীয় ফুটবল টিমে খেলেছেন৷ দুই ভাই খেলেছেন অলিম্পিক৷ নিখিলবাবুর নেতৃত্ব এবং কোচিংয়ে ইস্টার্ন রেল টিমে খেলেছেন পিকে বন্দ্যোপাধ্য্যায়ও৷ সেই নিখিল এবার থামলেন। এবং একইসঙ্গে থেমে গেল ভারতীয় ফুটবলের একটা অধ্যায়। সেই দলের মধ্যে শুধু রয়ে গেলেন তুলসীদাস বলরাম।