নিজস্ব প্রতিনিধি : তিনি যেটা ঠিক মনে করেন, সেটা সবার সামনে বলেও দেন। এটাই তাঁর বরাবরের স্বভাব। ঋদ্ধিমান সাহার সাথে লকডাউন আড্ডায় তাঁকে সেই মেজাজেই পাওয়া গেল। টিম ইন্ডিয়ার টেস্ট দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তবুও তাঁর কাছে সেরা অধিনায়ক বিরাট কোহলি নন। বরং মহেন্দ্র সিং ধোনিকেই এগিয়ে রাখলেন। এমনকি বিরাটের পছন্দের কোচ রবি শাস্ত্রী'র দিকে ভোট না দিয়ে অনিল কুম্বলে'কে এগিয়ে রাখলেন পাপালি। পেশাদার ক্রিকেটার হলেও তাঁর প্রথম প্রেম ও প্যাশন যে 'এফ ওয়ান কার রেস'। এক্সট্রাটাইম বাংলা ইউ টিউব চ্যানেলের লাইভ অনুষ্ঠানে এসে সেটাও জানিয়ে গেলেন 'বাংলা ক্রিকেটের নতুন আইকন'।
লকডাউন পর্ব : এখনও পর্যন্ত বেশ মজায় কাটছে। এমনিতেও প্রয়োজন না হলে আমি ঘরের বাইরে যাই না। এমনকি বিদেশ সফরে পরিবার নিয়ে গেলেও হোটেলের বাইরে বাইরে যাই না। সবসময় ঘরের ভিতরে থাকতে পছন্দ করি। তাই ঘরে থাকা আমার ক্ষেত্রে নতুন কিছু নয়। লকডাউনে আমি অভ্যস্ত। তবে এই লকডাউনের সময় পিতৃত্ব ব্যাপারটা আরও ভালভাবে শিখেছি। আমার মনে আছে আনভি যখন জন্ম নিয়েছিল, তখন আমি বেশি সময় দিতে পারিনি। কারণ আমি তখন জাতীয় দলের পাশাপাশি ক্লাব ক্রিকেট খেলছিলাম। কিন্তু এখন ওর অনলাইন ক্লাসেও সাহায্য করছি। একটু সময় পেলে নেটফ্লিক্সে বেশ কয়েকটি সিনেমা, ওয়েব সিরিজ দেখছি। তাছাড়া জাতীয় দলের ফিল্ডিং কোচ শ্রীধর আমাদের অনুশীলনের জন্য কয়েকটি ড্রিল দিয়েছেন। বাবার সাথে সেগুলো অনুশীলন করছি। এভাবেই কাটছে আমার লকডাউন।
কোলে মার্কেটের দিনগুলো : অন্যান্য জেলা থেকে ক্রিকেটাররা কলকাতায় এলে তাদের জন্য কোলে মার্কেটে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। কলকাতায় যেহেতু কোনও আত্মীয়স্বজন নেই, তাই আমাকেও সেখানে ঠাঁই নিতে হয়। প্রথমে শরদিন্দু পালের কুমরটুলি ক্লাবে খেলতে শুরু করি। আমার বন্ধু কামাল হাসান মন্ডলও একই ক্লাবে খেলতেন। বাবলু কোলে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পরে তিনিই আমার মেসে থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন। ৫-6 ক্রিকেটাররা একই ঘরে একসাথে থাকতেন। আজও কোলে মার্কেটের বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। মাঝেমধ্যেই সেখানে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করি। আড্ডা মারি। একটা সময় সন্ধেবেলা সিনেমা দেখার জন্য বাসের ভাড়া পর্যন্ত বাঁচিয়েছি। আবার টাকা কম থাকায় কোলে মার্কেট থেকে ইডেন গার্ডেন্স পর্যন্ত কিট ব্যাগ হেঁটেছি।
সরলতা : আমার বাবা-মা'র কাছ থেকে এটা শিখেছি। আমার পরিবারের সবাই এমন প্রকৃতির। তাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হলেও আমার মধ্যে কোনও বদল ঘটেনি। আমার কয়েকজন বন্ধুর জীবনযাত্রা প্রচুর বদলে গিয়েছে। কিন্তু আমি ওদের মত বদলে যেতে পারব না। তাই সাউথ সিটির মত বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে থাকলেও আমার পা এখনও পর্যন্ত মাটিতেই আছে। আমার কাছে এই মুহূর্তে দুটো গাড়ি আছে। সেটা আমার প্রয়োজনীয়তা। তবে বিএমডাব্লু গাড়ি নিয়ে আমার প্রয়োজনীয়তা নয়।
কেরিয়ারে ধোনি ফ্যাক্টর : অনুর্দ্ধ-১৯ ও ২২'এর সময় থেকেই ভারতের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখতাম। হ্যাঁ, আপনি বলতে পারেন যে ভারতের হয়ে আমার অভিষেক কিছুটা দেরিতে হয়েছিল। তবে দলে যদি মহেন্দ্র সিং ধোনির মত ক্রিকেটার থাকেন, তাহলে আপনাকে তো অপেক্ষা করতেই হবে। যিনি ততদিনে কিংবদন্তির তকমা পেয়ে গিয়েছিলেন। তাই সুযোগ না পাওয়া নিয়ে একটু হতাশা থাকলেও, কোনও আক্ষেপ নেই। ম্যাচ খেলতে না পারলেও দলের সঙ্গে অনুশীলন করছিলাম। উন্নতমানের জিনিসপত্র ব্যবহার করতে পারছিলাম। এটাই ছিল আমার কাছে বড় পাওনা।
টেস্ট অভিষেক : নাগপুর টেস্ট শুরু হওয়ার আগে আমাদের ওয়ার্ম-আপ সেশন চলছিল। সেই সময় রোহিতের সঙ্গে আমার ধাক্কাধাক্কি হয়। নিয়ম ছিল যার হাতে টেনিস বল থাকবে তাঁকে ছুঁতে হবে। আমার হাতে বল থাকার জন্য রোহিত আমাকে ছুঁতে যায়। সেইসময় ওর পায়ের গোড়ালি মুচড়ে যায়। এরপর আমি বদ্রিনাথকে নকিং দিচ্ছিলাম। কারণ, নাগপুরে বদ্রিনাথও অভিষেক ঘটায়। এদিকে সিরিজ শুরু হওয়ার আগে দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার সময় গ্যারি কার্স্টেন বলে দিয়েছিল যে আমার খেলার কোনও সুযোগ নেই। কারণ, ধোনিই কিপিং করবে। তাই আমিও অভিষেক নিয়ে ভাবিনি। এমনকি দলের প্রথমসারির বোলারদের সঙ্গে অনুশীলন করার সুযোগ পর্যন্ত পাইনি। কিন্তু টস করতে যাওয়ার সময় ধোনি হাসিমুখে বলে গেল, "সাহা তুই খেলছিস।" সেই টেস্টের প্রথম ইনিংসে শুন্য'তে ফেরার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ডেইল স্টেইন-মর্নি মর্কেলের বিরুদ্ধে ৩৬ রান করেছিলাম। যা আমার স্মৃতিতে আবদ্ধ।
অনুশোচনা : আমি যে স্তরের ব্যাটসম্যান সেভাবে এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রান করতে পারিনি। ৩'টি শতরান ও ৫'টি অর্ধ-শতরান করলেও আমার বিশ্বাস আরও রান করা উচিত ছিল। সেটা করতে পারলে আরও খুশি হতাম। পাশাপাশি বিভিন্ন সময় চোট আমার কেরিয়ারের অনেক ক্ষতি করেছে।
কাঁধের চোট : কাঁধের চোটের জন্য মুম্বই চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলাম। তখন ডাক্তার বলেছিলেন আমার কাঁধের যা অবস্থা তাতে অপারেশন করলেও আর খেলা সম্ভব নয়। আসলে এমন অস্ত্রোপচারের পর কামব্যাক করা খুব কঠিন হয়ে যায়। ফলে অনেকেই আমার ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। কিন্তু আত্মবিশ্বাসের উপর ভর করে আমি ফিরে এলাম। এবং ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পিঙ্ক বল টেস্টেও পারফরম্যান্স করেছি।
এফ ওয়ান কার রেস প্রীতি : সিঙ্গাপুর বেড়াতে গিয়ে আমরা মেরিনা বেই'তে গিয়েছিলাম। সেখানে 'এফ ওয়ান কার রেস' হয়। এই কার রেস প্রতিযোগিতা চোখের সামনে দেখা ছিল আমার কাছে স্বপ্নের মত। এবং আমি নিশ্চিত খুব তাড়াতাড়ি আবার কার রেসিং দেখবো। একটা সময় অনেক রাত পর্যন্ত জেগে কার রেসিং দেখতাম। আমি ১৯৯৯ সালে ক্রিকেট খেলা শুরু করলেও, ১৯৯৬ সাল থেকে কার রেসিং দেখি। তাই ক্রিকেট নয়। বরং কার রেসিং আমার প্রথম প্রেম।
সবচেয়ে কঠিন বোলার : আফগানিস্তানের রশিদ খানের বোলিংয়ে কিপিং করা সবচেয়ে কঠিন। কারণ ও একই গ্রিপে গুগলি ও ফ্লিপার দেয়। তাই নেটে ম্যাচের আগে ওকে নেটে কিপিং করা খুব জরুরী। না হলে কিপারের কপালে দুঃখ আছে। তবে স্পিনিং উইকেটে অশ্বিন ও জাদেজা'কেও কিপিং করা বেশ কঠিন।
ম্যাট রেনশো'কে 'সেট আপ' করে আউট : আমরা 2017 সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চিন্নস্বামিতে খেলছিলাম। এর আগে পুনে টেস্ট ওরা জিতেছে। সেই টেস্টে জাদেজার প্রতিটি ওভারের তৃতীয় বা চতুর্থ বলে ম্যাট রেনশো বাউন্ডারি কিংবা ওভার বাউন্ডারি মারছিল। এবং সেটা পিছন থেকে উপলব্ধি করলাম। তাই পরের ওভারে বোলিং করতে যাওয়ার সময় জাদেজার কাছে গিয়ে বললাম, লেগ স্টাম্পের বাইরে বল রাখতে। এবং সেটা জোরের উপর। আর সেই ফাঁদেই পা দেয় অজি ব্যাটসম্যান। ক্রিজ ছাড়তেই ওকে স্টাম্পড করেছিলাম। যা আমাকে আলাদা তৃপ্তি দিয়েছিল।
র্যাপিড ফায়ার......
১) স্ত্রী দেবারতি না প্রেমিকা দেবারতি? স্ত্রী দেবারতি।
২) সেরা অধিনায়ক বিরাট কোহলি না এমএস ধোনি? এমএস ধোনি।
৩) এসজি বা কুকাবুর বল? এসজি বল।
৪) অনিল কুম্বলে বা রবি শাস্ত্রী? অনিল কুম্বলে।
৫) আশ্বিন, জাদেজা না কুলদীপ, চাহল? আশ্বিন, জাদেজা।
৬) বাংলা খাবার না গুজরাটি খাবার? গুজরাটি খাবার।
৭) অনুষ্কা শর্মা বা ক্যাটরিনা কাইফ? কেউই নয়।
৮) বাংলা দলের হয়ে একজন ক্রিকেটার না বাংলা দলের অধিনায়ক? একজন সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে খেলতে চাই।