Photo- Google
এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্কঃ ৪ নভেম্বর, মিজোরাম ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের তরফে এক ভয়ংকর বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। যে বিবৃতিতে বলা হয় যে, মিজোরাম প্রিমিয়ার লিগ প্রতিযোগিতায় স্পট ফিক্সিং এবং বিভিন্ন গড়াপেটার অভিযোগে ২৪ জন ফুটবলার সহ ৩ জন অফিসিয়াল এবং ৩টি ফুটবল ক্লাবকে কঠোর শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেখানে ২৪ জন ফুটবলার ও ৩ অফিসিয়াল এক থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত কোনোরকম ফুটবল সম্পর্কিত বিষয়ের সাথে যুক্ত হতে পারবেনা। এই ঘটনাই চমকে দিয়েছে ভারতীয় ফুটবল মহলকে।মিজোরামের স্থানীয় আইন ও এজেন্সির সহায়তায় গভীর তদন্ত করে ফিক্সিংয়ের এই চক্র ধরা পড়েছে বলে জানানো হয় মিজোরাম ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের তরফে।
একজন, দুজন নয় ২৪ জন ফুটবলার একটি লিগ থেকে গড়াপেটার অভিযোগে সাসপেন্ড হচ্ছে এই ঘটনা বিরল এবং নিঃসন্দেহে ভারতীয় ফুটবলের কালো দিন। তবে শুধু মিজোরাম ফুটবলেই নয় সম্প্রতি গড়াপেটার অভিযোগে দিল্লি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের তরফে তিনজন ফুটবলারের সাসপেন্সনের কথা ঘোষণা করে। প্রসঙ্গত এই তিনজন ফুটবলারই বাঙালি। ফিফার শৃঙ্খলা কমিটির তরফে দুজন ফুটবলারকে ১০ বছর সাসপেন্ড এবং একজন ফুটবলারকে লাইফটাইম সাসপেন্ড করা হয়।
কিন্তু এখানেই সৃষ্টি হচ্ছে তর্ক-বিতর্কের। প্রশ্ন উঠছে কেন ফুটবলাররা গড়াপেটার অভিযোগে ধরা পড়লেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো কড়া শাস্তি নেওয়া যায়না?
মূলত, ভারতীয় আইনকানুনে ফিক্সিংয়ের জন্য সঠিক কোনো শাস্তির উল্লেখ নেই। ব্রিটিশ আমলের নিয়মই মেনে আসা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। বেশ কয়েকবছর আগে ভারতীয় সংবিধানে ফিক্সিং সংক্রান্ত নিয়মের সংশোধনের কথা উঠলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। ফলে স্থানীয় পুলিশ তদন্ত করে অভিযুক্তদের ধরলেও 'নন বেল-এবেল অফেন্সে' ছাড়া পেয়ে যায় তারা।
কিন্তু ফিফার তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে ফুটবল ফেডারেশন এবং অ্যাসোসিয়েশনগুলি ফুটবলার এবং ফুটবল ক্লাবগুলিকে চাইলে লাইফটাইম সাসপেন্ডও করতে পারবে।
আর সেই কারণেই দিল্লি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের তরফে তিনজন ফুটবলার এবং মিজোরাম ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের তরফে ২৪ জন ফুটবলারের বিরুদ্ধে সাসপেন্ডের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এখানে আরও একটি বিষয় উঠে আসছে। সম্প্রতি বাংলার ফুটবল লিগেও দেখা গিয়েছে বারংবার গড়াপেটার অভিযোগ উঠতে। এমনকি চলতি কলকাতা লিগে ম্যাচ চলাকালীন কলকাতা পুলিশের 'বুকি'দের ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও সকলের অজানা নয়। কিন্তু তাদের কি শাস্তি হল? তা কেউ জানেননা। এই জায়গাতেই মিজোরাম এবং দিল্লি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন দেখিয়ে দিল কীভাবে মোকাবিলা করা যাবে গড়াপেটার বিরুদ্ধে। ফিফার সম্মতিতে অ্যাসোসিয়েশনগুলি ফুটবলারদের সাসপেন্ড করতে পারবে। সেক্ষেত্রে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের লাইফটাইম সাসপেন্ড করার সুযোগ থাকবে বাংলার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের।
শেষ কয়েকবছরে ভারতীয় ফুটবলে ফিক্সিংয়ের রমরমা ক্রমশ বেড়েই চলেছে, যা ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যতকে ক্রমশ অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যে মিজোরাম থেকে বর্তমানে ভারতীয় ফুটবলে অসংখ্য ফুটবল প্রতিভা উঠে আসছে সেই মিজোরামেই ২৪ জন ফুটবলার সাসপেন্ড হচ্ছেন গড়াপেটার কারণে। ফলে যত দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা যাবে ততই মঙ্গল ভারতীয় ফুটবলের জন্য। এবং মিজোরাম ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের দৃষ্টান্তমূলক সিদ্ধান্ত কতটা প্রভাবিত করবে দেশের অন্যান্য ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে বিশেষত বাংলার ফুটবলকে। সেটাই দেখার