এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : বুধবার উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে একপ্রকার আশা শেষ হয়ে গিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদের। ৭২ মিনিটে রিয়াদ মাহরেজের গোলে অ্যাগ্রেগেটে ৫-৩ ফলে এগিয়ে যায় ম্যানচেস্টার সিটি। খেলা কার্যত ৯০ মিনিটের ঘরে, একাধিক রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকের চোখে জল, স্বপ্নটা শেষ হয়ে গেল বলে!
কিন্তু সেই সময় এক তরুণ ব্রাজিলিয়ান বিশ্বের কোটি কোটি রিয়াল সমর্থকদের আশা ফিরিয়ে আনেন। তার নাম রদ্রিগো। ২১ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান তারকা দুই মিনিটে দুটি গোল করে রিয়ালকে জিইয়ে রাখে এবং খেলা অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়। আর অতিরিক্ত সময়ে করিম বেঞ্জেমার পেনাল্টিতে রিয়াল মাদ্রিদ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে ফেলে।
কিন্তু কে এই রদ্রিগো, যিনি আজ রিয়াল সমর্থকদের নয়নের মণি? ২০১৯-২০ মরশুমে মাত্র ১৭ বছর বয়সে স্যান্টোস থেকে ৪৫ মিনিয়ন ইউরোতে রিয়াল মাদ্রিদে আসেন রদ্রিগো। এই সাইনিংকে অনেকেই রিয়ালের হতাশার সাইনিং বলে। কেন? কারণ সেই সময়ে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে সই করাতে মরিয়া ছিল রিয়াল, কিন্তু এমবাপ্পে পিএসজিতে যাওয়ায় কার্যত হতাশায় রদ্রিগোকে আনে তারা।
এবং অনেকেই আশা করেছিল, রিয়াল মাদ্রিদের রিজার্ভ দল ক্যাস্টিয়ার হয়ে খেলবেন রদ্রিগো। কিন্তু জিনেদিন জিদানের নজরে পড়ে যান তিনি, পাশাপাশি ইডেন হ্যাজার্ড ও লুকা জভিচের মত তারকারা ফর্ম ও ফিটনেসের অভাবে ভোগায় সুযোগটা চলে এসেছিল। আর ওসাসুনার বিরুদ্ধে অভিষেকে ৯৩ সেকেন্ডের মধ্যেই গোল করেন রদ্রিগো।
২০০১ সালের জানুয়ারি মাসে ব্রাজিলের ওসাসকোতে এক মধ্যবিত্ত বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন রদ্রিগো। বাড়িতে ফুটবলের পরিবেশটা বেশ ভালোমতই ছিল। ওনার বাবা এরিক ব্রাজিলের নিম্নস্তরের ডিভিশনে নয়টি বিভিন্ন ক্লাবে খেলে এসেছেন। এরিক সিদ্ধান্ত নেন ছেলেকে বিশ্বমানের ফুটবলার হিসেবে গড়ে তুলতেই হবে। যদিও রদ্রিগোর কথায়, বাবার থেকে মা তাকে ফুটবলে বেশি অনুপ্রেরিত করেছেন।
মাত্র ১০ বছর বয়সে স্যান্টোসের অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন রদ্রিগো। প্রথমে ক্লাবের ফুটসল দলে খেলতেন তিনি। এবং তার অনুপ্রেরণা হিসেবে ছিলেন ব্রাজিলের তিন মহাতারকা - পেলে, রবিনহো ও নেইমার। এই তিন ফুটবলারই স্যান্টোস থেকে গড়ে উঠেছেন, ফলে অনুপ্রেরণা হিসেবে এই তিন ফুটবলারকে বাছা স্বাভাবিকই ছিল রদ্রিগোর।
১৬ বছর ৩০০ দিন বয়সে স্যান্টোসের হয়ে অভিষেক করেন রদ্রিগো। তবে স্যান্টোসের হয়ে মাত্র ৪১টি সিরি আ ম্যাচ খেলেন তিনি, কিন্তু অল্প সুযোগেই নজর কেড়ে নেন রদ্রিগো। যার ফলে রিয়াল মাদ্রিদ বিপুল অর্থে সই করে এই ওয়ান্ডারকিডকে।
লা লিগার দুর্দান্ত অভিষেকের কথা তো বলাই হল, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ অভিষেকেও চমকে দেন তিনি। গালাতাসারের বিরুদ্ধে ৩৭৫ সেকেন্ড নেমেই দুটি গোল করেন রদ্রিগো।
এখন একা রদ্রিগোই নন, পাশে রয়েছেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র ও রেইনিয়ার। ফলে রিয়াল মাদ্রিদে অদূর ভবিষ্যতে সাম্বা স্বাদ আসছে, তা বলাই যায়। আর এই সাম্বা স্বাদের বড় অবদান থাকবে রদ্রিগোর, তা বলাই যায়।