এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : ফুটবল ইতিহাসে এমন অসংখ্য খেলোয়াড় রয়েছে, যারা কার্যত নিজেদের স্বপ্রতিভায় নিজেদের দলকে জিতিয়ে এনেছেন। তবে আজকের এই পেশাদার যুগে কোনও খেলোয়াড়ই এক ক্লাবে নিজের পুরো কেরিয়ার শেষ করতে পারে না। অনেকে বড় লিগে খেলার জন্য দল পালটায়, আবার এমন অনেক তারকা রয়েছে, যাদের বাধ্য করা হয় ক্লাব ছাড়ার জন্য।
এরকমই আমরা সাত এমন ফুটবল তারকার কথা বলব, যাদের কার্যত বাধ্য হয়ে ক্লাব ছাড়তে হয়েছে।
১. লিওনেল মেসি:
লিওনেল মেসিকে বার্সিলোনা ছাড়তে হয় এবং এই খবরটি কয়েক মুহূর্তে সারা বিশ্বের কাছে পৌঁছে যায়, মেসি এখনও অবধি বার্সার হয়ে ৭৭৪ ম্যাচ খেলেছিলেন এবং তার মোট গোল সংখ্যা ছিল ৬৭২, প্রায় তিনশোর কাছাকাছি ম্যাচে তিনি অ্যাসিস্ট করেছিলেন তার সাথে ৩৫ ট্রফিও জিতেছিলেন।
২০২১ সালে যখন বার্সিলোনা তার এই তারকা প্লেয়ারের সাথে চুক্তিবৃদ্ধি চেয়েছিলেন, মেসিও চুক্তির এর সময় বাড়িয়ে সেখানে থাকতে চেয়েছিলেন কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। কারণ যদি তারা এমন করতেন সেটা স্প্যানিশ আর্থিক নিয়মের বিরুদ্ধাচরণ হত।
২. সের্জিও র্যামোস:
২০১৫ সালে রিয়াল মাদ্রিদের অধিনায়ক র্যামোস নিজের নিজের কেরিয়ার শেষ করতে চেয়ে ছিলেন মাদ্রিদে। নিজের প্রিয় ক্লাবকে ছাড়ার কারণ হিসেবে র্যামোস কিছুদিন আগে তার এক প্রেস কনফারেন্সে বলেন - "প্রথমত আমি বলতে চাই আমি কখনোই মাদ্রিদ ছাড়তে চাইনি, আমি সব সময় সেখানে থাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু কয়েক মাস আগে থেকে ক্লাব আমাকে বেতন কেটে এক বছরের চুক্তির প্রস্তাব দেয়। টাকাটা কখনোই আমার কাছে সমস্যা ছিল না কিন্তু সময় এর মেয়াদ এটা ছিল। ওনারা আমাকে এক বছরের কথা বলেছিলেন কিন্তু আমি চেয়েছিলাম দু'বছরের জন্য।"
কিন্তু ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ফিওরেন্তিনো পেরেজ কোন রকম কোন সমঝোতা করে ঝুঁকি নিতে চাননি এই ৩৬ বছর বয়সী প্লেয়ারকে দু বছরের জন্য নিয়োগ করে। যার জেরে বাধ্য হয়ে ক্লাব ছাড়তে হয় স্প্যানিশ ডিফেন্ডারকে।
৩. ইকের ক্যাসিয়াস :
২৫ বছরের অভিজ্ঞতার পর ক্যাসিয়াস তৈরি করে শক্তিশালী এক ডিফেন্ডিং টিম রিয়াল মাদ্রিদ। স্প্যানিশ গোলকিপার ক্যাসিয়াস দল ছাড়ার আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেন - "আজ আমাকে এই ক্লাব কে ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে যেটা এক সময় আমাকে সবকিছু দিয়েছিল, এখন মনে হয় এটা যেন কালকের কথা যখন আমি ৯ বছরের ছিলাম এবং শুরু করেছিলাম খেলা আমি প্রথমবার রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি পড়েছিলাম এবং নিজের স্বপ্ন পূরণ করেছিলাম।"
এনাকেও নিজের ক্লাব ছাড়তে হয় তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে, ৯ বছর বয়সে যখন তিনি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলেন তখনই তিনি ভেবেছিলেন যে এই ক্লাবেই তিনি তার খেলার জীবন শেষ করবেন। ২০০০, ২০০২ এবং ২০১৪ এ তিনি তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিলেন এবং ২৫ বছর ধরে নিজের টিমের হয়ে এত ভালো পারফর্মেন্স এর পরেও তাকে ক্লাব ছেড়ে দিতে বাধ্য হতে হয় কারণ তার বয়স এবং নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।
প্রশ্নগুলো আসে রিয়ালের তৎকালীন কোচ জোসে মোরিনহোর থেকে। এটা মূলত করা হয়েছিল যাতে একজন নতুন কম বয়সী গোলকিপারকে দলে আনা যায়।
৪. লুই সুয়ারেজ :
২০২০ সালে তারকা ফুটবলার লুই সুয়ারেজকে খুব খারাপভাবে অপমানিত করে বার্সিলোনা টিম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। তিনি ছিলেন বার্সার তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। তিনি ২০১৪ সালে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লিভারপুল থেকে বার্সিলোনায় সই করেন। তিনি ছিলেন খুব ভালো ফিনিশার। তিনি বার্সার হয়ে প্রায় ৩০০টি ম্যাচ খেলেছিলেন।
৩৪ বছর বয়সী এই খেলোয়াড়ের ভালো পারফর্মেন্স থাকা সত্ত্বেও তাকে টিম থেকে বের করে দেয়া হয়। সুয়ারেজ বলেন- "আমি এটা মেনে নিতে বাধ্য হই যে তারা আমাকে আর রাখতে চায় না। যখন আমি জানতে পারি যে বার্সা আমাকে আর রাখতে চায় না সেটা আমার জন্য খুবই হতাশাজনক হয়ে ওঠে, আমি এটা ভাবতেই পারিনি।"
৫. ফ্রাঙ্ক রিবেরি:
ফ্রাঙ্ক রিবেরি হলেন বায়ার্ন মিউনিখের কিংবদন্তী ফুটবলার। বায়ার্ন সর্মথকরা তাকে কিং বলে ডাকত। তিনি বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে টানা ১২ বছর খেলেছিলেন। তিনি ১২ বছরে ৪২৫টি ম্যাচ খেলে ১২৪টি গোল করেছিলেন। তিনি ছিলেন বায়ার্ন মিউনিখের একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়ার যার স্পিড, ড্রিবলিং এবং ম্যাচ রিডিং ক্ষমতা ছিল দেখার মতো।
কিন্তু পরবর্তীকালে চোট-আঘাত সমস্যার কারণে বারবার তাকে মাঠের বাইরে থাকতে হয় এবং তিনি কয়েকটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেতেন। এই কারণে বায়ার্ন মিউনিখ কর্তৃপক্ষ ৩৬ বছর বয়সী এই ফুটবলারকে ছেড়ে দেয় এবং তার বদলে ফ্রান্সেরই কমবয়সী তারকা ফুটবলার কিংসলে কোম্যানকে সাইন করায়।
ফ্রাঙ্ক রিবেরি পরে প্রেস কনফারেন্সে বলেন- "ডিরেক্টরদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথার পরে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এবার আমার ক্লাব ছেড়ে দেওয়া উচিত কিন্তু সেটা আমার কাছে খুবই হতাশাজনক মুহূর্ত এবং ক্লাব আমার মনে সব সময় থাকবে।"
৬. আন্দ্রে পিরলো:
এই ইতালিয়ান ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ছিলেন এসি মিলনের একজনের তারকা ফুটবলার। তিনি যখন এসি মিলানে ছিলেন তিনি তাঁদের হয়ে প্রায় ৪০০টি ম্যাচ খেলেছিলেন এবং তিনি ছিলেন খুবই প্রতিভাশালী ফুটবলার। তার দৃষ্টিনন্দন ফুটবল দেখার জন্য মিলান সর্মথকরা মুখিয়ে থাকত। তার বল স্ন্যাচিং এবং ম্যাচ রিডিং ক্ষমতা ছিল দেখার মতো। তাকে ইতালিয়ান ফুটবল সেরা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারও বলা হয়।
এরপর তার বয়স ৩০ ঊর্ধ্ব হয়ে যাওয়ায় তাকে মিলান কর্তৃপক্ষ আর রাখতে চায়নি। তখন তিনি জুভেন্টাসের হয়ে সাইন করেন। তিনি তারপর 'সিরি আ' তে পরপর তিনবার সেরা ফুটবলার হয়েছেন। তিনিই প্রমাণ করেছেন বয়স হলো সংখ্যা মাত্র।
৭. আলেসান্দ্রো ডেল পিয়েরো:
ডেল পিয়েরো ছিলেন জুভেন্টাসের কিংবদন্তী ফুটবলার। তিনি তার ১৯ বছরের জুভেন্টাস কেরিয়ারে ৭০৫টি ম্যাচ খেলেছিলেন। একসময় মনে করা হয়েছিল যে তিনি ক্লাব ছেড়ে দেবেন টাকার কারণে কিন্তু এই ফুটবলার ক্লাবের খারাপ সময়ে ক্লাব ছেড়ে যাননি।
কিন্তু পরে ক্লাব কর্তাদের চাপে ডেল পিয়েরোকে ক্লাব ছাড়তেই হয়।