এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : ভারতের জন্য, গত মাসে অলিম্পিকের মতো, টোকিও প্যারালিম্পিক্সও একটি স্বর্ণপদক দিয়ে শেষ হতে পারত। কিন্তু প্যারালিম্পিকে ভারতের সকল ক্রীড়াপ্রেমীদের চমকে দিয়ে সর্বকালের সেরা প্রদর্শনে শেষ হল এবং সামগ্রিকভাবে ১৯টি পদক নিয়ে ভারত পদক তালিকায় ২৪তম স্থানে শেষ করল।
ব্যাডমিন্টনে চারটি পদক এসেছে, যে খেলাটি প্রথম এই প্যারালিম্পিক্সেই যোগ হয়েছে এবং অন্যান্য শাখায় নতুন বিভাগে আরও চারটি পদক জয়ের ফলে ভারতের পদক জয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
২৩ বছর বয়সী জ্যাভলিন থ্রোয়ার সুমিত আন্তিল, যিনি সোনার পথে তিনটি বিশ্ব রেকর্ড করেছেন, তিনি দেখিয়েছেন যে তার প্রশিক্ষণ এবং এক্সপোজার ভারতীয় খেলাধুলার নতুন পোস্টার বয় নীরজের থেকে খুব আলাদা ছিল না।
২০১৮ সালে, কিছু প্যারা ক্রীড়াবিদ নীরজ চোপড়ার মতো অন্যান্য ক্রীড়াবিদদের সাথে ফিনল্যান্ডে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছিলেন এবং এটি তাদের জন্য একটি বিশাল মানসিক প্রেরণা ছিল। তারা গত তিন বছরে ইতালি, ফ্রান্স, তিউনিসিয়ায় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় খেলার সুযোগ পেয়েছে, যা ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকের প্রস্তুতিতেও সাহায্য করবে।
আন্তিল লাখ টাকার প্রোস্টেটিক ব্লেড, যন্ত্রপাতি এবং বায়োমেকানিক্স সাপোর্ট পাওয়ার জন্য ভারতের স্পোর্টস অথরিটি এবং এনজিও গো স্পোর্টস ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
রৌপ্য পদকপ্রাপ্ত ডিস্ক থ্রোয়ার যোগেশ কাঠুনিয়া বলেছেন, “সুযোগ-সুবিধা ছাড়াও সরকার এখন প্যারা-অ্যাথলিটদের সাফল্য নগদ পুরস্কার দিয়ে এবং চাকরির ক্ষেত্রে সাধারণ ক্রীড়াবিদদের মতোই সমান গুরুত্ব দিচ্ছে। এটি আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে।” চোপড়ার মতো, আন্তিল তার জ্যাভলিনে সোনার জন্য হরিয়ানা সরকারের কাছ থেকে ৬ কোটি টাকা পাবেন।
তাছাড়া, প্যারালিম্পিক্সের সর্ববৃহৎ ৫৪ সদস্যের ভারতীয় দলটি ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান টার্গেট অলিম্পিক পোডিয়াম স্কিমের (টপস) একটি অংশ। ২০১৮-১৯ থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত সরকার প্যারা-স্পোর্টসে প্রায় ৮.২ কোটি টাকা ব্যয় করেছে, ক্রীড়ামন্ত্রী এই বছর লোকসভায় তা বলেছেন।
ক্রীড়া মন্ত্রণালয় স্বর্ণ ও ব্রোঞ্জ পদক বিজয়ী শ্যুটার অবনী লেখারার বাড়িতে কম্পিউটারাইজড ডিজিটাল টার্গেট স্থাপন করার জন্য অর্থব্যয় করেছিল, তার এয়ার রাইফেল, গুলি এবং আনুষাঙ্গিক জিনিসের খরচ ও এর মধ্যে ছিল। টপস হুইলচেয়ারে থাকা রৌপ্য পদকপ্রাপ্ত ভাবিনা প্যাটেলকে প্র্যাকটিসের জন্য একটি রোবটও প্রদান করেছিল গত বছর লকডাউন এর সময়।
“প্রতিপক্ষ চীনা হলে অনেক মানুষ ভয় পায়। তাদের পরাজিত করে আমি প্রমাণ করেছি যে তারাও মানুষ,” ভাবিনা বলেন, একমাত্র ভারতীয় টেবিল টেনিস খেলোয়াড় যিনি প্যারালিম্পিকে পদক জিতেছেন।
পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০০৮ সাল থেকে প্যারা-ক্রীড়াবিদদের সাথে কাজ করা, গো স্পোর্টস ফাউন্ডেশন রিও ২০১৬ এর জন্য ১১ জন প্যারা-ক্রীড়াবিদদের বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
গোস্পোর্টসের নির্বাহী পরিচালক দীপ্তি বোপাইয়া বলেন, "তারা অর্থাৎ প্যারালিম্পিক্স কমিটি ফোন করে আমাদের জিজ্ঞাসা করত যে আমরা একজন বিশেষ ক্রীড়াবিদকে কিভাবে সাহায্য করছি যাতে কোন ডুপ্লিসিটি না হয়। অবনীর (অবনী লেখারা) জন্য, সরকার বিদেশে কিছু প্রশিক্ষণ এবং প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করে এবং আমরা এখানে তার কোচিংয়ের জন্য অর্থ প্রদান করি।"
এছাড়াও আর একটি প্রাইভেট সংস্থা অলিম্পিক গোল্ড কোয়েস্ট (ওজিকিউ), ১০ জন প্যারা-ক্রীড়াবিদদের সাথে যুক্ত ছিল যারা পদক জিতেছে।
প্যারা-ব্যাডমিন্টনের প্রধান কোচ গৌরব খান্না লখনউ এর বিভিন্ন ফেসিলিটি সম্পর্কে বলেন, "আগে আমাদের খেলার জন্য টাইম স্লট বুক করতে হতো, কিন্তু এখন আমাদের সমস্ত সুবিধা এবং ক্রীড়া বিজ্ঞান সরঞ্জাম পেশাদার অ্যাকাডেমি রয়েছে। আমরা এখন অনুশীলনের সময় নিজেরাই নির্ধারণ করতে পারি এবং সেখানে জিম, স্টিম বাথ, আইস বাথ, হাইড্রোথেরাপি সবই রয়েছে পেশাদার ক্রীড়াবিদের জন্য যা যা প্রয়োজন।"
গান্ধীনগরের এসএআই ক্যাম্পাস এবং ইন্দোরের টেবিল টেনিস সেন্টারের ফেসিলিটি গুলিও প্যারা-অ্যাথলিটদের জন্য সজ্জিত, কোচিং পদ্ধতি বছরের পর বছর পরিবর্তিত হচ্ছে। সেই জন্য ২০১৫ সালে প্যারা-অ্যাথলিটদের সংখ্যাছিল ৭০০ ছিল এবং ২০১৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮০০ তে।
তিনবারের প্যারালিম্পিক পদকজয়ী দেবেন্দ্র ঝাঝারিয়া বলেছেন, "আমরা এখনও উন্নতি করতে পারি কারণ পদক কেবল অ্যাথলেটিক্স, শুটিং, ব্যাডমিন্টন এবং টেবিল টেনিসে এসেছে কিন্তু টোকিও আমাদের খেলার উদ্যম বাড়িয়ে দিয়েছে।"