এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক: হারের খরা চলছে যেন মোহনবাগানে। এই আইএসএলে মুম্বই সিটি এফসি, এফসি গোয়া ও কেরালা ব্লাস্টার্সের কাছে পরপর হেরেছে সবুজ মেরুন বাহিনী। যা বিগত কোন আইএসএলেই হয়নি মোহনবাগানের সাথে। হারের হ্যাটট্রিক নিয়ে কি বললেন মোহন বাগান কোচ জুয়ান ফেরান্ডো? চলুন, দেখে নেওয়া যাক।
আরও পড়ুন - হারের হ্যাটট্রিক! শিল্ড জয়ের দৌড়ে পিছিয়ে গেল মোহনবাগান
মোহনবাগানের এমন পারফরমেন্স নিয়ে সমালোচনা হবে সেটা খুবই স্বাভাবিক। তাই প্রশ্নবানের মুখে পড়তে হয়েছে স্বয়ং কোচকেও। ফেরান্ডো জানিয়েছেন, চোট প্রবণ খেলোয়াড়রা মাঠে না ফিরলে এই সমস্যার সমাধান হবে না। তিনি জানিয়েছেন, “যে খেলোয়াড়রা চোট পেয়ে বসে রয়েছে, তারা মাঠে না ফিরলে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। গত তিন ম্যাচে আমরা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে খেলেছি। চোট-আঘাত, কার্ড সমস্যায় জর্জরিত ছিলাম আমরা। আমাদের এখন চোট-আঘাত সেরে ওঠার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আশা করি, আর কোনও চোট হবে না। তবে এত সমস্যার মধ্যেও দল কিন্তু লড়ছে। আজ যেমন দ্বিতীয়ার্ধে লড়াই করেছে ছেলেরা। এটা অবশ্যই ইতিবাচক ব্যাপার।”
সমালোচনার তীর উঠছে দলের রিজার্ভ বেঞ্চের দিকেও। তবে জুয়ান জানিয়েছেন, “যখন দল জয়ের মধ্যে থাকে, টানা তিন-চারটে ম্যাচে জেতে, তখন পরিস্থিতি অনেক সোজা হয়, তখন বেঞ্চের খেলোয়াড়রাও ভাল খেলে। কারণ, তারা নিজেদের জায়গায় খেলতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে অনেককেই অনভ্যস্ত জায়গায় খেলতে হচ্ছে। টাংরি, সুমিত, হুগো এদের উইঙ্গারের ভূমিকা পালন করতে হচ্ছে। তবু যে যেখানেই খেলে থাকুক, তারা অনেক চেষ্টা করেছে ভাল খেলার। এটা কম বড় প্রাপ্তি নয়”।
আরও পড়ুন - রাহুলের অনবদ্য শতরানকে বিশেষভাবে সম্মান জানালেন বিরাট কোহলি
হারের কারণ জানিয়ে ফেরান্ডো আরও বলেন, “গত সাত দিনে আমরা চারটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলেছি। নর্থইস্ট, মুম্বই, গোয়া ও কেরালার বিরুদ্ধে। যখন একেকটা ম্যাচে আমরা তিন-চারজন করে খেলোয়াড়কে খুইয়েছি, তখন সব কিছুই কঠিন মনে হয়েছে। মনে হয়েছে সবাই আমাদের বিরুদ্ধে। এখন আমরা খুবই খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। সময় যত গড়াবে, ততই এই দুঃসময়টা আশা করি কেটে যাবে”।
এ দিন দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে অন্য মোহনবাগানকে দেখা যায়। বিশেষ করে আক্রমণে। প্রথমার্ধে যেখানে কোনও শটই নিতে পারেনি দল, সেখানে দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ১৫ মিনিটে মধ্যে চারটি শট নেয় মোহনবাগান, যার মধ্যে একটি ছিল গোলে। কিন্তু কেন প্রথমার্ধে তাঁর দল ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি, তা নিয়ে কোচ বলেন, “আজ প্রথমার্ধে পরিস্থিতি খুবই কঠিন ছিল। একে তো গত ম্যাচে হেরে আমরা এই ম্যাচে নেমেছিলাম। অনেকেই ছোটখাটো চোট নিয়ে খেলতে নেমেছিল, যার ফলে তাদের আত্মবিশ্বাসও কম ছিল। এক গোল খেয়ে যাওয়ার পরে একটা ভয়ও কাজ করেছে আমাদের খেলোয়াড়দের মনে। আরও বড় ব্যবধানে হারার ভয়”।
আরও পড়ুন - সোশ্যাল মিডিয়ার কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যকারীদের বিরুদ্ধে বড় বার্তা দিলেন শামসি
তবে দ্বিতীয়ার্ধে যে ভাবে খেলায় ফেরে মোহনবাগান, তাতে খুশি ফেরান্ডো। এর মধ্যে ইতিবাচকতার আঁচ পেয়েছেন তিনি। ফেরান্ডো বলেছেন, “দ্বিতীয়ার্ধে যে লড়াইটা করেছে ওরা, তাতে আমি খুশি। ওই সময়ে মাথা ঠাণ্ডা রেখে ঝুঁকি নেওয়াটা জরুরি ছিল ঠিকই। কিন্তু বেশ কঠিন ছিল। ওরা যে সেই ঝুঁকিটা নিতে পেরেছে, এটাই অনেক। আজকের দ্বিতীয়ার্ধের পারফরম্যান্সের পর আশা করি, দলের ছেলেরা সামান্য হলেও আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে। আমাদের এর পর সুপার কাপের প্রস্তুতি নিতে হবে। তখন এই সামান্য আত্মবিশ্বাসটা কাজে লাগবে আমাদের। এর পরে আমরা হাতে সময় পাব। এই সময়ে আশা করি দলের ছবিটা অনেকটাই পাল্টে যাবে এবং পরের পর্যায়ে আশা করি আমরা ছন্দে ফিরে আসব”।
কোচ এও বলেন, “এই নিয়ে চতুর্থ ম্যাচে পুরো ৯০ মিনিটের জন্যই খেলছে থাপা। ওকে খুব ক্লান্ত লাগছিল, তবু নেমেছে। টাংরিকেও অতটা আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছিল না। যার ফলে মাঝমাঠ থেকে আমাদের আক্রমণ সে ভাবে শুরু হয়নি। শুরুর দিকে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে পারিনি আমরা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে যে ছেলেরা সাহস করে আক্রমণে উঠেছে, প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলেছে, এর জন্য ওদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। চোট পাওয়া খেলোয়াড়রা ফিরে এলে এবং হাতে সময় নিয়ে ফের প্রস্তুতি শুরু করব যখন, তখন আবার দল আগের অবস্থায় চলে আসবে, আশা করি”।
আরও পড়ুন - রাজনীতিতে এলে সমাজে কী বদল আনবেন? উত্তর দিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি
নতুন বছরের নতুন মরশুমের আগে এর বিহিত করা সম্ভব নয় এও জানিয়েছেন কোচ। দলের খেলোয়াড়দের মন চাঙ্গা রাখতে হবে তাদের মনোবল ফেরাতে হবে। যারা চোটের কারণে দেশ হয়ে খেলতে পারছেন না তাদেরকেও মানসিকভাবে সাপোর্ট করতে হবে এমনটাও জানিয়েছেন কোচ। তাহলে কি কোচের বয়ান অনুযায়ী নতুন বছরের নতুন মৌসুমে আবার পুরনো ছন্দে ফিরবে মোহনবাগান? এই প্রশ্নই ঘুরছে ফুটবল মহলে।