এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : এ কেমন ইস্টবেঙ্গল? যে ইস্টবেঙ্গল এক সময়ে গোটা দেশে দাপিয়ে বেড়াত, যে ইস্টবেঙ্গল বিদেশের মাটিতে দেশের নাম উজ্জ্বল করত, যে ইস্টবেঙ্গল এই বছরের শুরুতেই জিতেছিল সুপার কাপ - এটা কি সেই ইস্টবেঙ্গল? এই ইস্টবেঙ্গল যেন পয়েন্টের দানছত্র খুলে বসেছে। আইলিগের শিলং লাজং থেকে আইএসএলের এফসি গোয়া, সবাই জয় আর তিন পয়েন্ট নিয়ে যাচ্ছে। ঠিক এমনটাই হল শনিবার, বলের দখল ও সুযোগ বেশি তৈরি করল ইস্টবেঙ্গল, কিন্তু ২ গোল করে জিতে গেল জামশেদপুর এফসি।
কার্লেস কুয়াদ্রাতের বিদায়ের পর আপাতত হাল ধরেছেন বিনো জর্জ। তবে শনিবার যে স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সাথে ফুটবলটা খেললেন মাদিহ তালালরা, তাতে তিন পয়েন্ট আসাটা ব্যাপারই ছিল না। কিন্তু তিন পয়েন্ট জামশেদপুর কাড়ল না, কেড়ে নিলেন ইস্টবেঙ্গলেরই দুই সৈনিক ক্লেইটন সিলভা ও লালচুংনুংগা। প্রথমজন গোল মিসের বহর দেখালেন, পরের জন জামশেদপুরকে দুটো গোলের রাস্তা দেখিয়ে দিলেন।
৬৫ শতাংশ বল পজেশন, ১৮টি শট, যার মধ্যে ৬টি টার্গেটে। তবুও গোল পেল না ইস্টবেঙ্গল! সুন্দর পাসিং থেকে গতি ও বোঝাপড়ার ভালো সংমিশ্রণ দেখা যাচ্ছিল ইস্টবেঙ্গলের খেলায়। কিন্তু গতির বিপরীতে গিয়ে রেই তাচিকাওয়ার গোলার মত শটে প্রথম পোস্টে পরাস্ত হলেন দেবজিত মজুমদার। লালচুংনুংগার ভুল টাচে বল পেয়ে সানান মহম্মদ শট মারতে যান, কিন্তু সেটি হেক্টর ইয়ুস্তে প্রতিহত করেন। সেই বল রেই তাচিকাওয়া পেলে সেখান থেকেই সজোরে শট মারেন। আর তারপর যেন ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে শুরু করল ইস্টবেঙ্গল।
নাওরেম মহেশ সিং থেকে তালাল, বল যেমন অফুরন্ত বাড়িয়েছেন, সেরকমই মিস করেছেন ক্লেইটন-নন্ধকুমাররা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে সেই দুরন্ত ফুটবল বজায় রেখেছিল ইস্টবেঙ্গল, কিন্তু ফরোয়ার্ডরা ৬ গজ থেকে বল বাইরে মারলে বা দূর্বল শট মারলে গোল হবে কি করে। তবুও সমতায় ফেরার দারুণ সুযোগ এসেছিল ইস্টবেঙ্গলের কাছে। ৬৩ মিনিটে ক্লেইটনকে বক্সের মধ্যে ফেলে দেন জাভি হার্নান্ডেজ, যার ফলে রেফারি জামাল মহম্মদ পেনাল্টি দেন।
কিন্তু সল ক্রেস্পোর দূর্বল পেনাল্টি ধরে নেন আলবিনো গোমস। যে সলকে গোটা ম্যাচে শুধু ক্যামেরার ক্লোজ-আপ ছাড়া খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, পেনাল্টি মারার শটে যে আত্মবিশ্বাসের ছিটেফোঁটাও ছিল না, বোঝাই যাচ্ছিল। আর তারপরেই এল দ্বিতীয় গোল। ৭০ মিনিটে নিজেদের বক্সে ঢোকা নির্বিষ মাইনাস নিজের গোলেই ঢুকিয়ে দিলেন লালচুংনুংগা। স্রেফ জাতীয় দলে খেলা ডিফেন্ডার ট্যাগটার জন্যই ইস্টবেঙ্গল দলে সুযোগ পাচ্ছেন, তা স্পষ্ট।
বিনো জর্জের অধীনে সুন্দর ও আক্রমণাত্মক ফুটবলের প্রতিচ্ছবি দেখা গেলেও সেই সাহসটা দেখাতে পারলেন না। অফ ফর্মে থাকা ক্লেইটনকে পুরো ৯০ মিনিট খেলিয়ে গেলেন। এদিকে ডেভিড লালানসাংগাকে নামালেন যখন ২ গোলে হারছে ইস্টবেঙ্গল। মাঠেই নামতে পারলেন না বিনোর অধীনে দুরন্ত ফুটবল খেলা জেসিন টিকে! এই ম্যাচে হারের কিছুটা দায় কিন্তু বিনোর উপরেও বর্তায়।
সব মিলিয়ে, এই ইস্টবেঙ্গলকে পরবর্তী যে কোচই দায়িত্ব নিন না কেন, ফুটবলারদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ানো এবং সব কিছু করতে পারি ভাব কাটাতে না পারলে, হয়ত তাকেও গো ব্যাক ধ্বনি শুনতে হবে আগামী দিনে।