সৌরভ গাঙ্গুলির আবিষ্কার! ফুলটস বলে বোল্ড ও ক্রিকেটীয় আত্মহনন! স্টিভ স্মিথ

Photo-ICC
সাইফ: অস্ট্রেলিয়ানরা বোধহয় এমনই হয়! অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে মনে আছে নিশ্চয়ই? অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ছিলেন দুনিয়ার সেরা উইকেটকিপারদের একজন। একদিন শুধু সাঙ্গাকারার একটা ক্যাচ মিস করেছিলেন স্ট্যাম্পের পেছনে দাঁড়িয়ে। সতীর্থ ম্যাথু হেডেনকে বললেন, "বন্ধু, আমার সময় শেষ।" এরপর চলে গেলেন স্বেচ্ছা অবসরে। জীবনের ৯৯তম টেস্ট খেলতে নামার সকালেই অবসর ঘোষণা করলেন, অবাক হয়ে গেলেন অধিনায়ক রিকি পন্টিং। এ কীভাবে সম্ভব? সম্ভব অস্ট্রেলিয়ানদের পক্ষে সম্ভব! আবেগ আর কঠোরতার এক অদ্ভুত মেলবন্ধনে তারা তৈরি হয়।
শততম টেস্ট খেলার স্বপ্ন কে না দেখে? কিন্তু থামতে কখন হয়, সেটা জানতে হয়!
স্টিভেন স্মিথও অবসর ঘোষণা করলেন, সবাইকে অন্ধকারে রেখে। এক বিষণ্ন রাজার বিদায়। কারণ? ভারতের বিরুদ্ধে শামির ফুলটস বলে লাইন মিস করে বোল্ড হলেন। সেটাই কি আসল কারণ? ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে স্মিথ ফুলটস খেলতে গিয়ে আউট হবেন, এমন দৃশ্য বিরল। স্মিথ নিজেও হয়তো নিজের মনকে সান্ত্বনা দিতে পারেননি। নিজের শেষটা নিজেই দেখে নিলেন সবার আগে, ইতি টানলেন নিজের একদিনের ক্রিকেট জীবনের খাতায়। অভিমান? নাকি বুঝেছেন—আর নয়, অনেক হয়েছে!
অস্ট্রেলিয়া যদি এই ম্যাচটা জিতত, তবে সেটা স্মিথের জন্যই সম্ভব হতো। যতক্ষণ স্মিথ ক্রিজে ছিলেন, ব্যাগি গ্রিনের আশা ছিল। কোনও ভারতীয় তখন নিশ্চিন্তে খেলা দেখছিলেন না। স্মিথ থাকলে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর আরও ৩০ রান বাড়তেই পারত!
নিজের প্রতি নিজেই অবিচার করলেন। এভাবেই নিজেকে শাস্তি দিলেন! আরও একবার নিজের আগে দেশকে প্রাধান্য দিলেন। শুধুমাত্র দেশের জন্যই তো পন্টিং, হেডেন, ক্লার্করা ক্যারিয়ারের শেষপ্রান্তে এসেও লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন। লেগ স্পিনার থেকে ব্যাটার হয়ে ওঠা স্টিভ স্মিথও সেই পথেই হেঁটেছিলেন। এবং অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিংকে দিয়েছিলেন গভীরতা, আত্মবিশ্বাস। বেইলি- ক্লার্কদের পর অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
লেগ স্পিনার থেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হওয়া—একটা সহজ যাত্রা ছিল না। বিরাট কোহলি, জো রুট, কেন উইলিয়ামসনদের সঙ্গে একইসঙ্গে উচ্চারিত হয়েছে তার নাম—স্টিভ স্মিথ।
২০১০ সালে একদিনের এবং টেস্ট ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া দলে অভিষেক হলেও, গোটা বিশ্ব তাকে চিনেছিল ২০১২-১৩ আইপিএল মরসুমে। সৌরভ গাঙ্গুলি তখন পুনে ওয়ারিয়র্সের অধিনায়ক। পুনের হয়ে ব্যাট হাতে নামলেন স্মিথ, আর তখনই তার প্রতিভার ঝলক দেখতে পেল ক্রিকেট বিশ্ব। ব্যাটার স্মিথ যেন এক কথায় আবিষ্কৃত হয়েছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলির মস্তিষ্ক থেকে। তার ব্যাটিং প্রতিভার উন্মেষ ঘটেছিল মহারাজের হাত ধরে।
হরভজন সিং, যুবরাজ সিং, বীরেন্দ্র শেহবাগ, মহেন্দ্র সিং ধোনি, জাহির খান—এমন বহু প্রতিভা সৌরভ গাঙ্গুলির ছোঁয়ায় আকাশ ছুঁয়েছিল। দীর্ঘদিন হলো তারা ক্রিকেট ছেড়েছেন। স্টিভ স্মিথ ভারতীয় না হয়েও সেই তালিকার আপাতত শেষ সংস্করণ।
একটা ফুলটস বলে বোল্ড—ব্যাস, নিভে গেল ফ্যাব ফোরের একটা বাতিস্তম্ভ! এতটা নিঃস্বার্থ হলে চলে? ব্যাগি গ্রিনের হয়ে অন্তত আগত বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলার যোগ্যতা তো আপনার ছিল! কিন্তু নিজেকে নিজেই গুটিয়ে নিলেন এভাবে!
যদিও টেস্ট ক্রিকেট এখনও আছে, কিন্তু একদিনের ক্রিকেটে তার অবদান কি ভোলা যায়? নিঃসঙ্গ সম্রাটরা হয়তো এভাবেই অন্ধকারে মিশে যান!