সব্যসাচী বাগচীঃ সঞ্জয় সেন আপনাকে খোলা চিঠি.....
একেই বলে পোয়েটিকে জাস্টিস। কী তাইতো সঞ্জয় দা।
মাত্র ছয় বছর আগের ঘটনা। ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি। নতুন বছরের শুরুতেই আপনি ব্যাপক অপমানিত হলেন! তখন পাশে আপনার একমাত্র ছেলে। আপনাকে লাঞ্চিত হওয়ার সেই লজ্জার মুহুর্ত খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম। রাগ হচ্ছিল। মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছিল।
মোহনবাগানকে দীর্ঘদিন পর আই লিগ এবং ফেডারেশন কাপ এনে দেওয়া কোচকে শীতের সেই সন্ধ্যার দিকে থুথু হজম করতে হয়। যে সব সবুজ-মেরুন সমর্থকরা এক সময়, সঞ্জয় সেনের নাম স্লোগান তুলতেন, তাঁরাই সেই সন্ধ্যার দিকে সোচ্চারে বলেছিলেন, 'গো ব্যাক সঞ্জয়।' অবশ্য এর কয়েক বছর আগে মহামেডান স্পোর্টিং থেকেও তিনি বিদায় নিতে বাধ্য হন। ক্লাবকে দীর্ঘদিন পর আইএফএ শিল্ড জেতানোর পরেও, প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত ছিলেন ইউনাইটেড স্পোর্টসের প্রাক্তন কোচ।
কোনওভাবে ওঁর প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন মোহনবাগানের তৎকালীন মিডিয়া ম্যানেজার ইমরান। যাই হোক এরপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। হাবাসের বিশ্বস্ত সৈনিক হিসেবে আইএসএলে সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। কিন্তু সঞ্জয় সেনের যে 'মেজাজটাই আসল রাজা'। চেতলার ডাকাবুকো মানুষটা কারও ডেপুটি হয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন না।
আর তাই কোচিং নিয়ে আরও লেখাপড়া শুরু করলেন। পরিশ্রমের ফল এল হাতেনাতে। এএফসি প্রো লাইসেন্স সার্টিফিকেট পেলেন। কিন্তু তাতে কী, চাকরি কোথায়? অনেক দূর কথা এগোলেও, ভারতীয় সিনিয়র দলের হেড কোচ হতে পারলেন না। অথচ তাঁর হাত ধরেই (পড়ুন, কোচিং) প্রীতম কোটাল, প্রবীর দাসের, প্রণয় হালদারের মতো ফুটবলাররা জুনিয়র ভারতীয় দল থেকে সুনীল ছেত্রীদের ড্রেসিংরুমে গিয়েছিলেন।
তবে অনেকটা সময় অপেক্ষা করলেও, সঞ্জয় নিজেকে চিনিয়ে দেওয়ার আরও একবার সুযোগ পেলেন। এবং সেই সুযোগেই বাজিমাত। কেরলের মতো জায়ান্টদের ফাইনালে হারিয়ে ফের সন্তোষ ট্রফি জয়। সাত বছর পর 'ভারতসেরা' বাংলা। রবি হাঁসদার শট ও সঞ্জয়ের ছকেই কুপোকাত কেরল।
এবার ঘরে ফেরার পালা। অনেক আগে থেকেই সঞ্জয় দা-র ফোন ব্যস্ত। মেসেজ করেও লাভ নেই। ভালবাসার অত্যাচারে মোবাইল দেখার সময় কোথায়! বুধবার রাত ৮'টায় বিমানবন্দরে ফিরছেন 'বাংলার বাঘরা'। শুরু হবে আর্থিক সাহায্য ও দেদার সংবর্ধনার পালা।
তবে যতদূর আমি সঞ্জয় সেন'কে চিনি, সেই ব্যক্তি এই লোকদেখানো সংস্কৃতিকে পাত্তা দেবেন না। অতীতে আই লিগ ও ফেড কাপ জিতলেও, ময়দান ও কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় পা রাখতে চাইতেন না। এবারও কি ঠিক সেভাবেই বিরক্তি প্রকাশ করবেন? যদিও না গত কয়েক বছরে বদলে গিয়ে থাকেন।
ড্যারেল ডাফি আইজলের বিরুদ্ধে গোল না মিস করলে, কিংবা জেজে পেনাল্টি মিস না করলে, আপনি আরও একবার কলার তুলে ঘুরতে পারতেন। যাই হোক, ওপেন হার্ট সার্জারির পর এই প্রথমবার এককভাবে সাফল্য পেলেন। সঞ্জয় দা আপনাকে অভিনন্দন।
এআইএফএফের বিরুদ্ধে মুখ খুলে আপনি তখন ব্যান। এমন প্রেক্ষাপটে শিলিগুড়িতে মোহনবাগান খেলতে নেমেছে। অগনিত মেরিনার্সরা আপনার ছবি দেওয়া মাস্ক পড়ে গ্যালারি ভরিয়েছিল। এমন আবেগ কি এবার উপচে পড়বে সঞ্জয় দা? কে জানে!
লিখতে বসে রাত ১২টা বেজে গেল সঞ্জয় দা। আপনার, আমার, আমাদের সবার বাংলা দলের জন্য আকাশ জুড়ে বাজি ফাটছে।
২০১৮ সাল। সাত বছর আগে এই ফুটবলের জন্য ময়দানে আপনাকে অপমানিত হতে হয়েছিল। নিজেকে আরও একবার যোগ্য প্রমাণ করে আরও একটা নতুন বছরে আপনি ময়দানে পা রাখতে চলেছেন। ইউনাইটেড স্পোর্টস, মোহনবাগান-মহামেডানকে ট্রফি দেওয়ার পর এবার বাংলার প্রত্যাশা পূরণ করলেন।
সঞ্জয় দা আপনি মানুন কিংবা বকা দিন, এটাই পোয়েটিক জাস্টিস। 'আপনি থাকছেন সঞ্জয় দা'।
ইতি,
সব্যসাচী বাগচী
ক্রীড়া সাংবাদিক, এক্সট্রা টাইম