সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়
একজন ফুটবলপ্রেমী হিসাবে এবং মোটামুটি পৃথিবীর সমস্ত প্রথম সারির ফুটবল লীগগুলো মন দিয়ে দেখার বা নজরে রাখার অভিজ্ঞতা থেকে আমি একটা কথা ভীষন ভাবে বিশ্বাস করি যে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং উচ্চমানের ফুটবল লীগ হলো ইংল্যান্ডের প্রিমিয়ার লীগ।
আমার অনেক বন্ধুই প্রায়শই বলে, এত উন্নত যখন লীগের মান, তাহলে ইংল্যান্ডের দল গুলোর সাফল্যের মান কেনো সেল্টিক, রেঞ্জার্স, পেনারোল, বার্সিলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, বেয়ার্ন মিউনিখ, আয়াক্স কিংবা জুভেন্টাসের মত দলগুলোর থেকে কম? কেনই বা বিশ্বের সবচেয়ে সফল সেরা ২০ টা দলের মধ্যে কেবলমাত্র ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবা লিভারপুল আসে? আর কেনই বা বিশ্ব ফুটবলে ইংল্যান্ড বার বার ভালো দল নিয়ে এসেও খালি হাতে ফিরে যায়? কিংবা কেনোই বা ১৮৭২ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা শুরু করলেও ১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া বা ২০২০ সালে ইউরোপিয়ান কাপে রানার্স হওয়া ছাড়া এই দেশের কোনো সাফল্য নেই? আসলে একের বিরুদ্ধে একের লড়াইয়ে হয়তো দলগুলো পিছিয়ে থাকলেও কোনো লিগে এত তুল্যমূল্য লড়াই হয় না।
২০২২- ২০২৩ সালের উদাহরণই যদি ধরা হয়, এ এমন এক লীগ, যেখানে প্রথম দলকে যে কোনো দিন ২০ নম্বর দলও ৪-৫ গোল দিয়ে চলে যেতে পারে।
আবার ০-৩ পিছিয়ে থেকেও একটা দল ৯৩ মিনিটে ৩-৩ করার পরেও ৩-৪ গোলে হেরে যেতে পারে।
এ এমন এক লীগ যেখানে একই দল যেমন ০-২ পিছিয়ে থেকে ৩-২ জয়ী হয়, আবার পরের দিন ২-০ এগিয়ে থেকেও জেতা ম্যাচ মাঠে ছেড়ে রেখে আসে। এত তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা, একাধিক দলের একই মানের ফুটবল, এত ওপর- নিচ, এত ঘাত - প্রতিঘাত, মনে হয়না পৃথিবীর কোনো দেশের লীগে আছে।
এবারের প্রতিযোগিতাকেই যদি ধরা যায়, ২০০৩-২০০৪ সালের পর আবার আর্সেনাল দীর্ঘদিন একগুচ্ছ তরুণ প্রতিভাকে নিয়ে শীর্ষে থেকেও আজ প্রায় লিগ হাতছাড়া। এছাড়া প্রথম সারির দল না হয়েও নিউক্যাসেল, ব্রাইটন, অ্যাস্টন ভিলা, ব্রেন্টফোর্ড, ক্রিস্টাল প্যালেস যে ফুটবলটা খেলেছে মুগ্ধ হতে হয়। এর সাথে পেপ গার্দিওলার নেতৃত্বে আর্লিং হাল্যান্ড আর ডি ব্রুইয়েনের ম্যানচেস্টার সিটি গোটা বছর যে ফুটবলটা খেলেছে, যার জন্য এবছর আবার ত্রিমুকুট পাবার সম্ভাবনা জেগে উঠেছে। পরিশেষে ক্যাসেমেরও, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার, রদ্রি, ব্রুনো গুইমারেস, হ্যারি কেন, মার্কাস রাসফোর্ড, মার্টিন ওদেগার্ড, বুকায়া সাকার মত ফুটবলার এবারে যে ফুটবলটা পৃথিবীর সমস্ত ফুটবলপ্রেমীর সামনে তুলে ধরেছে, তার জবাব নেই।
ঠিক এই কারণেই আমার খুব মনে হয়, ইশ, লিও মেসিকে যদি পৃথিবীর এই কঠিনতম লীগে পারফর্ম করতে দেখতাম কত ভালো হতো।
আবার ঠিক ওই একই কারণে মনে হয় ৩৬ বছর বয়সেও একটা মানুষ যখন পৃথিবীর কঠিনতম লীগে ২০-২২ টা গোল করে, তখন তার উচ্চতা টা কতখানি?