এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : ইতিমধ্যেই দেশের ভরসাযোগ্য ডিফেন্ডার আনোয়ার আলিকে নিয়ে প্রাথমিক রায় জানিয়েছে প্লেয়ার স্ট্যাটাস কমিটি। আর সেই রায় আনোয়ারের পক্ষেই থাকলেও যেহেতু মোহনবাগানের সাথে চুক্তিভঙ্গটি নিয়মবিরুদ্ধ হয়েছে, তাই দিল্লি এফসি ও ইস্টবেঙ্গলকে ৫ দিনের মধ্যে জবাবদিহি চাইতে বলা হয়েছে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, জরিমানা কিংবা নির্বাসনের শাস্তি হয়ত পেতে পারে ক্লাবগুলি। কিন্তু সেই শাস্তি কতটা ভারী? আনোয়ার কে ছাড়ার পর শান্তি পাবে কি মোহনবাগান? অথবা শাস্তি পেয়ে আনোয়ারকে পেলে ইস্টবেঙ্গল আনন্দিতই কি হবে?
এদিকে শোনা যাচ্ছে দিল্লি এফসিতে রেজিস্টার হওয়ার জন্য মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে চিঠি দিয়েছেন আনোয়ার। এখন প্রশ্ন হল, কোন শর্তে আনোয়ারকে ছাড়বে মোহনবাগান? সূত্রের খবর, আনোয়ারকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট দিতে রাজি মোহনবাগান। তবে দিল্লি এফসি ও ইস্টবেঙ্গলের তরফ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করবে তারা।
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, প্লেয়ার স্ট্যাটাস কমিটির কাছে প্রায় ২০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। যদিও মোহনবাগানের আইনজীবীরা হিসেব করে দেখেছেন, ২০ কোটি নয়, সর্বসাকুল্যে প্রায় ১৩ কোটি টাকা পেতে পারে তারা। সত্যি কি মোহনবাগান ১৩ কোটি টাকা ক্ষতি পূরণ পেতে পারে আনোয়ারের জন্য? এ ক্ষেত্রে তো লাভই হবে বাগানের এই বাণিজ্যের ফুটবলে। ইস্টবেঙ্গল ১৩ কোটি টাকা ক্ষতি পূরণ দিয়ে তারপর আনোয়ারের মূল্য চুক্তির মূল্য দিয়ে কি আদৌ লাভবান হবে? সেই প্রশ্নেই আলোকপাতের জন্যে এই ভিডিও দেখতে থাকুন।
মোহনবাগান যেমন ১৩ কোটির একটা প্রাথমিক হিসেব কষছে। ইস্টবেঙ্গলের অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, তাদের হিসেব অনুযায়ী জরিমানার পরিমাণ ২ কোটি টাকার বেশি হবে না। কেন? আনোয়ার আলিকে ৫ বছরের লোন চুক্তিতে মোট ১১ কোটি টাকায় নিয়েছিল মোহনবাগান। হ্যাঁ ১১ কোটি। সেক্ষেত্রে ১ বছর খেলা হয়ে গেলে বাকি থাকে ৪ বছর। অর্থাৎ ৪ বছরে অন্ততপক্ষে ৮ কোটি টাকা দিতে হতে পারে। কিন্তু খুব সম্ভবত ইস্টবেঙ্গল মনে করছে, গোটা ৪ বছরের ক্ষতিপূরণ তাদের কেন দিতে হবে? সেটা কি সম্ভব? মোহনবাগান এটা ভাবছে বা কী করে? আনোয়ার বা কোনো ফুটবলারকে বিক্রি করলে ট্রান্সফার ফি কি এত পাওয়া যায়? এখানে তিনটি নিয়মের একটি লাগু হতে পারে।
নিয়ম ১। ইস্টবেঙ্গলকে এক বছরের ক্ষতি পূরণ দিতে হতে পারে।
নিয়ম ২। ফিফার লোন চুক্তির নতুন নিয়ম সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনে লাগু হবে আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে। ফলে খুব বেশি হলে ৬ মাস থেকে ১ বছরের ক্ষতিপূরণ দিতে হতে পারে তাদের।
নিয়ম ৩। ফিফার ক্ষতিপূরণের আইনের আরও একটি দিক রয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, আনোয়ারের পরিবর্তে যে খেলোয়াড়কে আনবে মোহনবাগান, তাকে আনতে যে খরচ হবে, সেই পরিমাণ অর্থও হয়ত দিতে হতে পারে ইস্টবেঙ্গলকে। তার দাম যদি ১ কোটি বা ৫০ লক্ষ হয় তাহলে সেটাই দিতে হবে ইস্টবেঙ্গলকে।
এদিকে শোনা যাচ্ছে, বেশ কয়েক দিন আগে চন্ডীগড়ে যখন দিল্লি এফসি কর্তা ও আনোয়ার আলির গডফাদার রঞ্জিত বাজাজের সাথে ইস্টবেঙ্গলের তিন থিঙ্কট্যাঙ্কের আলোচনা হয়েছিল আনোয়ারকে নেওয়ার বিষয়ে, তখন এই ক্ষতিপূরণগুলি নিয়ে আগেই হিসেব করা হয়েছিল। অর্থাৎ দিল্লি এফসির জন্য ট্রান্সফার মূল্য, আনোয়ারের বেতন ও আনোয়ারের জন্য জরিমানা, সবটাই হিসেব করেছিল ইস্টবেঙ্গল।
তবে আনোয়ারের এই জটিল বিষয়টি দ্রুত কাটবে না, এমনটাই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। কারণ প্লেয়ার স্ট্যাটাস কমিটির রায় যাবে ফেডারেশনের অ্যাপিল কমিটিতে, তারপর অ্যাপিল কমিটির সিদ্ধান্ত যাবে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটিতে। এটাই নিয়ম। এছাড়া প্রয়োজনে প্লেয়ার স্ট্যাটাস কমিটির রায়ে স্টে অর্ডারের দাবিও করতে পারে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। কারণ শোনা যাচ্ছে মোহনবাগান থিঙ্ক ট্যাংক মনে করছে, স্টে অর্ডার না চাইলে ইস্টবেঙ্গল জার্সি পরিয়ে মহা সমারোহে অনুশীলনে নামিয়ে দিতে পারে আনোয়ারকে। ফলে আনোয়ার আলি কবে পুরোপুরি মাঠে নামতে পারবেন, তা এখনও ধোঁয়াশার মধ্যেই রয়েছে।
মোহনবাগান সরাসরি ইস্টবেঙ্গলকে জড়াতে চায়নি, চেয়েছিল লড়াই হোক রঞ্জিত বাজাজের সঙ্গে। আসলে আনোয়ারই শুনানির সময় সই প্রসঙ্গ বলতে গিয়ে ইস্টবেঙ্গলের কথা বলে দেয়। এদিকে মোহনবাগান সুপার জায়েন্টের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, অনিচ্ছুক ঘোড়াকে না রাখাই ভাল। অর্থাৎ আনোয়ারকে বাদ দিয়েই নতুন মরসুম নিয়ে ভাবা শুরু করে দিয়েছে মোহনবাগান। আনোয়ার নয় বরং তার পিছনে থাকা রঞ্জিত বাজাজের ব্যবহার হতাশ করেছে মোহনবাগানকে। ভারত সেরা দল বানিয়ে জাতীয় দলের ফুটবলারকে ছাড়াটা তাদের কাছে বেদনার হলেও জোর করে আইনি প্রয়োগের সাহায্য নিয়ে খেলাতে চায় না মোহনবাগান।
আর একটি বিষয় শোনা যাচ্ছে একবার নয় বেশ কয়েকবার স্থায়ী চুক্তির জন্য কী চাই মোহনবাগানের পক্ষ থেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আনোয়ারকে। যখন আনোয়ার এবং তার সহযোগী বাজাজ এই পর্যন্তই নিয়ে এলেন ব্যাপারটি তখন থেকেই আনোয়ারের বিকল্প খুঁজছে মোহনবাগান।