এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : ভারতীয় ফুটবলকে আজকের দিনে নিয়ন্ত্রণ করেন কারা? ফেডারেশন কর্তা না ক্লাবকর্তারা? উত্তরটা প্রত্যক্ষভাবে সঠিক হলেও পরোক্ষভাবে মেঘনাদের মত ভারতীয় ফুটবলের কলকাঠি থাকে এক বিশেষ গোষ্ঠীর মানুষদের হাতে। সেই গোষ্ঠীর নাম হল এজেন্ট। ভারতীয় ফুটবলে আজ বহু সংখ্যক এজেন্ট, যারা ফুটবলারদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নির্ধারণের মূল কাজটি করেন, কেউ না চাইলেও তারাই হর্তা কর্তা বিধাতা! এমন কিছু এজেন্ট রয়েছেন, যারা স্রেফ নিজেদের স্বার্থে ও পকেট গরম করতে ভালো খেলতে থাকা খেলোয়াড়দের কেরিয়ার নষ্ট করে দেন। প্রথমে মাথা নষ্ট করেন, তারপর কেরিয়ার! সাম্প্রতিক সময়ে ইতিহাসের পাতা ঘাটলে এমন উদাহরণ অজস্র রয়েছে, শুধু বেশি টাকার জন্য অন্য ক্লাবে গিয়ে সেই ফুটবলারের কেরিয়ারই শেষ হয়ে যায়, কিন্তু লাভবান হন তারই এজেন্ট।
এবার সেই ইতিহাসের পাতায় নতুন সংযোজন হওয়ার পথে রয়েছেন তরুণ উইঙ্গার পিভি বিষ্ণু। এই মুহুর্তে ভারতীয় ফুটবলের সব থেকে নজরকাড়া খেলোয়াড় হিসেবে উঠে এসেছেন বিষ্ণু। বিনো জর্জের হাত ধরে ইস্টবেঙ্গলে আগমণ হয়েছে বিষ্ণুর, আর নিজের অসাধারণ খেলায় ইতিমধ্যেই অস্কার ব্রুজোর ভরসা জিতেছেন। কিন্তু সেই বিষ্ণুকে পেতে এবার মরিয়া আইএসএলের একাধিক বড় ক্লাব।
আর সেক্ষেত্রে বিষ্ণুকে অন্য ক্লাবে পাঠিয়ে নিজের পকেট গরম করতে চাইছেন তার এজেন্ট বলজিৎ সিং রিহাল, যিনি এই মুহুর্তে ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম বড় এজেন্ট। শোনা যাচ্ছে, বিষ্ণুকে অন্য ক্লাবে যাওয়ার জন্য চাপও দিচ্ছেন বলজিৎ, যার জন্য খেলায় প্রভাব পড়ছে বিষ্ণুর। শনিবার হায়দরাবাদ ম্যাচে তার অফ ফর্ম খেলাই এর উদাহরণ। বিষ্ণু কি অফ ফোকাস হয়ে পড়ছেন? এমনকি বিষ্ণুর প্রচারের জন্য আইএসএল কর্তৃপক্ষকেও প্রভাবিত করছেন বলজিৎ, যাতে ধারাভাষ্যে তার নাম বেশি বলা হয় এবং ম্যাচের সেরার পুরষ্কারও তিনি পান। হ্যাঁ শোনা যাচ্ছে এসব কথাও।
যদিও ২০২৬ সাল অবধি বিষ্ণুর চুক্তি রয়েছে ইস্টবেঙ্গলে, কিন্তু অধিক অর্থের জন্য বিষ্ণুকে ক্লাব বদলানোর চাপ দিচ্ছেন তার এজেন্ট। আর এখানেই আসছে প্রশ্ন, আবারও কি হারিয়ে যাওয়া এক তারকার তালিকায় নাম জুড়তে চলেছেন বিষ্ণু? এজেন্টের চাপে নতিস্বীকার করে কি ইস্টবেঙ্গল ছাড়বেন এই কেরলবাসী?
ইতিহাসের কথা বলছিলাম না, জবি জাস্টিনকে মনে আছে? ইস্টবেঙ্গলে ফিনিক্স পাখির মত উত্তরণ হয়েছিল তার। কিন্তু স্রেফ তার এজেন্টের প্রভাব ও অধিক অর্থের লোভের জন্য আইএসএলে গিয়ে হারিয়ে যান জবি। জানেন সেই এজেন্ট কে ছিলেন? বলজিৎ সিং রিহাল। এই এজেন্টই জবিকে অন্য ক্লাবের লোভ দেখিয়ে ইস্ট বেঙ্গল থেকে নিয়ে গেছিল। তারপর কাল ক্রমে হারিয়ে যান তরুণ প্রতিভা।
কৃষকের রাজ হাঁস রোজ একটি করে সোনার ডিম পাড়তে। লোভী কৃষক সব সোনা নেবে বলে একদিন হাঁসের পেট কেটে ফেলেছিল। তারপরের গল্পটা সবার জানা। এখানেও এজেন্ট সংস্কৃতি আর তার সীমাহীন লোভ। এভাবেই শেষ করছে ভারতের ফুটবল কে।
এই অবস্থায় আরও এক জবি জাস্টিন যাতে না হন বিষ্ণু, সেই প্রার্থনা করা ছাড়া এখন আর উপায়ও নেই। কারণ আমাদের হাতে পেন্সিল ছাড়া আর কিছু নেই।